নাকের এলার্জি

নাকের এলার্জি রোগের সাথে আমরা কমবেশি সবাই পরিচিত। এই রোগ আমাদের অনেকেরই হয়ত আছে কিন্তু আমরা শুরুতে তেমন গুরুত্ব দেই না। মনে করি, সর্দি- এ আর এমনকি তিন চার-দিন বাদে এমনিতেই সেরে যাবে। কিন্তু এখান থেকেই ভয়াবহ আকার ধারন করতে পারে। তাছাড়া নাকের এলার্জি খুবই বিরক্তিকর একটি বিষয়ও বটে! সাধারণত বসন্তকালে নাকের এলার্জি বা নাসাপ্রদাহ দেখা দেয়।

নাকের এলার্জি এর লক্ষণ

  • নাক চুলকাতে থাকে, সাধারনত এক নাক বন্ধ হওয়া।
  • নাক দিয়ে ক্রমশ পানি পড়তে থাকে, নাকের ঘ্রাণশক্তি কমে যাওয়া।
  • অনেকের চোখ ফুলে যায় অথবা চোখ লাল হয়ে যা।
  • হাচি হতে থাকে, এক সময় তা শ্বাসকষ্টেও রূপ নিতে পারে।
  • মাথাব্যথা ও ঘোরা অনুভব হওয়া, শরীরে জ্বর জ্বর বা ম্যাজম্যাজ ভাব হওয়া।

কারা নাকের এলার্জি রোগে আক্রান্ত হয়

শীত প্রধান অঞ্চলের বাসিন্দাদের মাঝে এই রোগীদের সংখ্যা বেশি। তবে বাংলাদেশ ধারণা করা হয়ে থাকে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ মানুষ নাসাপ্রদাহে ভুগে থাকেন। তবে এই রোগের সবচেয়ে বেশি পাদুর্ভাব  অস্ট্রেলিয়ায়। ধারণা করা হয়, অস্ট্রেলিয়ায় ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ মানুষ কেবলমাত্র বসন্তকালে নাসাপ্রদাহে ভোগেন। এটা একটা বংশগত রোগও বটে। আর যেকোন বয়সের লোক এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

নাকের এলার্জি নিয়ে উইকিলিংক দেখুন এখানে

নাকের এলার্জি কেন হয়

এই রোগে মূলত বংশগত একটি রোগ। তবে অনেক ক্ষেত্রে এলার্জেনের সংস্পর্শে এলে নাকে এলার্জির উপসর্গ প্রকাশ পায়। যদি কেউ এলার্জেনের সংস্পর্শে আসে তাহলে নাকে অবস্থিত সেল গুলো ভেঙ্গে যায় এবং তার ফলে অ্যাক্টিভ অ্যামাইনো নির্গত হয় যা থেকে এই রোগের উপসর্গগুলো ধীরে ধীরে প্রকাশ পেতে শুরু করে এবং একসময় অসহ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।

ফুলের রেনু, রাস্তার ধুলাবালি, ঘরের পুরাতন ধুলোবালি ইত্যাদি থেকে নাসাপ্রদাহ হওয়ার আশংকা সবচেয়ে বেশি। সুতরাং নাকের এলার্জি যাদের সচরাচর হয় তাদের এই ধরণের ধুলাবালি থেকে দূরে থাকাই ভালো৷ তবে যে শুধু ধুলাবালির কারণে নাকের অ্যালার্জি দেখা দিবে ব্যাপারটা ঠিক তেমন নয়।  এলার্জি যুক্ত খাবার অথবা কোন নির্দিষ্ট বস্তুর প্রতি ব্যক্তির এলার্জি থাকে তাহলে সে ক্ষেত্রেও নাকের এলার্জি দেখা দিতে পারে।

সুতরাং সুনির্দিষ্ট উপায় ব্যক্তির কোন কোন জিনিসের প্রতি এলার্জি রয়েছে যে সকল জিনিসের সংস্পর্শে এলে নাকের এলার্জির লক্ষণ গুলো প্রকাশ পায় সেই সকল বস্তু বা জিনিস এড়িয়ে চলতে হবে।

কেউ যদি নাকের অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হয় তাহলে শ্বেত রক্তকণিকা কর্তৃক উৎপাদিত হিস্টামিন নামক এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ উৎপাদন ব্যাহত হয়। এবং দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকে।

নাকের এলার্জির ঔষধের নাম

ইওসিনোফিল এরমাত্রা পরীক্ষার মাধ্যমে এই রোগটি নির্ণয় করা যেতে পারে। রোগ নির্ণয় করা গেলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হবে। যদিওবা এই রোগ সম্পূর্ণরূপে কখনও ভাল হয় না।  তবে ওষুধ সেবনের মাধ্যমে সাময়িকভাবে সুস্থতা লাভ করা যায়।

তবে নাসাপ্রদাহে্র ঔষধের একাধিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। সুতরাং এই ওষুধ দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবহার করা মোটেও উচিত নয়। নাকের এলার্জির প্রধান দুটি ঔষধ হচ্ছে এন্টিহিস্টামিন এবং স্টেরয়েড।  এন্টিহিস্টামিন এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার চেয়ে স্টেরয়েড এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বেশি। সুতরাং ডাক্তাররা সবসময় এন্টিহিস্টামিন সমৃদ্ধ ঔষধের পরামর্শ দিয়ে থাকেন৷  তবে ক্ষেত্রবিশেষে স্টেরয়েড গ্রহণের পরামর্শ দেন।

আপনার নাকের এলার্জি থেকে থাকলে দেরি না করে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন এবং নিয়ম মেনে ঔষধ সেবন করুন।

নাকের এলার্জির ভ্যাকসিন

বর্তমানে চিকিৎসা ব্যবস্থা বেশ উন্নত। সুতরাং এলার্জি একবার হলে যে সেই এলার্জি আর ছাড়বে না ব্যাপারটা ঠিক তেমন নয়। সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক নাকের এলার্জির একটি ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত হয়েছে এবং এটি  এলার্জিক রাইনাইটিস রোগের অন্যতম চিকিৎসা।  সুতরাং যদি কোন ব্যক্তি যদি নাকের এলার্জির ভ্যাকসিন গ্রহণ করতে চান তাহলে সে ক্ষেত্রে তার রোগ সম্পূর্ণরূপে নিরাময় হলেও হতে পারে।

সতর্কতা

আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ নাসাপ্রদাহের মত রোগ সম্পর্কে অবগত নয়। সুতরাং তাদের যদি এলার্জি উপসর্গগুলো দেখা দেয় তাহলে তারা তাবিজ-কবজ কিংবা হাতুড়ে ডাক্তারের উপর ভরসা করে দিন কাটাতে থাকে। যা করা মোটেও উচিত নয়!

সুতরাং নাসাপ্রদাহ সম্পর্কে সবাইকে অবগত করতে হবে এবং এর লক্ষণ চিকিৎসা সম্পর্কে সবাইকে জানাতে হবে। সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় করে রোগ উপশমের জন্য ঔষধ গ্রহন করতে হবে। অনেকের ক্ষেত্রে নাসাপ্রদাহ রোগ ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে, এমনকি মৃত্যুর খবর পর্যন্ত শোনা গেছে।

যাদের বডি ইমিউন সিস্টেম দুর্বল তারা এই রোগে আক্রান্ত হলে বেশ দুর্ভোগ হয়। সুতরাং অবহেলা না করে সঠিক রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা নেওয়া সকলের জন্য একান্ত প্রয়োজন।

এই লেখাটি পড়ে উপকৃত হয়ে আপনি যদি রেডিটুরিডিং ব্লগকে ডোনেট করতে চান তাহলে বিকাশ-০১৬১৪১৭১৭৬৫ অথবা নগদ-০১৭১৪১৭১৭৬৫ অথবা ইউক্যাশ-০১৭১৪১৭১৭৬৫ এ আপনার ডোনেশন পাঠাতে পারেন।

অথবা,

আমাদের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করেও আমাদের উৎসাহিত করতে পারেন। ইউটিউব চ্যানেল লিংক এখানে। আশা করি অবশ্যই ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করে আমাদের সহযোগীতা করবেন। তাহলে আমরা উৎসাহিত হয়ে আরও লেখা পাবলিশ করব।

ধন্যবাদ।

Previous articleকে হবে আগামী বিশ্বের সুপারপাওয়ার
Next articleবাংলা সাহিত্যে দেশ ভাগ
টুকিটাকি লেখালখি করি!