ডার্ক ওয়েব

ইন্টারনেট ব্যবহার করতে কে না ভালোবাসে? বর্তমানে সকলেই প্রায় সকল কিছুর জন্যই ইন্টারনেট ব্যবহার করে। এই ধরুন আমাদের কোন কিছু সার্চ করার প্রয়োজন হলে আমরা Google এ চলে যাই, এটা বিনোদনের জন্য Facebook বা YouTube এ চলে আসি। তো আপনারা কি জানেন যে, আমরা শুধুমাত্র ইন্টারনেটের ৫-৬ শতাংশ ব্যবহার করি। আর বাকি ৯৪-৯৫ শতাংশই আমাদের অজানা। এই অজানা অংশকেই বলা হয় ডার্ক ওয়েব বা ডিপ ওয়েব। আপনারা অনেকেই হয়তো ডার্ক ওয়েবের কথা শুনে থাকবেন। আবার অনেকেই নাও শুনতে পারেন। সেটা কোনো বিষয় নয়। আজকে আমরা ডার্ক ওয়েব কি? সেটা নিয়ে আলোচনা করবো।

আরও পড়ুনঃ ড্রপবক্স কি এবং ড্রপবক্স ব্যবহার করে কি কি করা যায়?

ডার্ক ওয়েব (Dark Web)

ডার্ক ওয়েব নামটাই কেমন যেন একটু ভূতুড়ে ভূতুড়ে লাগছে তাইনা? আসলে ডার্ক ওয়েব মূলত ডিপ ওয়েব(Deep Web) এর একটি অংশ। আমাদের কোনো কিছু সার্চ করার প্রয়োজন হলেই আমরা Google এ চলে যাই এবং সেখানে আমাদের প্রয়োজনীয় জিনিসটি সার্চ করে একটি নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে চলে যাই। কিন্তু এই ডিপ ওয়েব ডার্ক ওয়েবের কোনো কিছুই আপনি গুগল সার্চ করে বা কোনো সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমে ঢুকতে পারবেন না। এগুলোতে ঢোকার জন্য একটি নির্দিষ্ট ইউজারনেম এবং পাসওয়ার্ড এর প্রয়োজন হয়। যেগুলো সবাই জানে না। এগুলো সম্পূর্ণভাবে সিকিউর করা থাকে।
আপনাদেরকে উদাহরণ দেই। যেমন ধরুন, আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ডিটেইলস। আপনার যদি নিজের ব্যাংক একাউন্টে ঢুকতে চান তাহলে কিন্তু অবশ্যই আপনার ইউজারনেম এবং পাসওয়ার্ড এর প্রয়োজন হয়। যেটি শুধুমাত্র আপনিউ জানেন। আপনার এই ব্যাংক একাউন্ট ডিটেলস কিন্তু কেউ কোনো সার্চ ইঞ্জিন বা কোন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে দেখতে পারবেনা। এটাকে আপনারা ডিপ ওয়েব এর একটা অংশ হিসেবে ধরতে পারেন।

তাছাড়াও দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংরক্ষণ করে রাখা হয় এই ডিপ ওয়েবের মধ্যেই। বিভিন্ন দেশের তথ্য, সংবিধানের তথ্য আবার পরীক্ষার ফলাফল ইত্যাদি তথ্যই ডিপ ওয়েবের মধ্যে রাখা হয়। যেগুলো সবাই দেখতে পায়না।

ডিপ ওয়েবের আরও ভেতরের অংশ হলো ডার্ক ওয়েব। এটা আরো অনেক বেশি গভীরতর। ডার্ক ওয়েব কে কখনো কখনো ডার্ক নেটও বলা হয়। তবে এটা ডার্ক ওয়েব হিসেবেই বেশি জনপ্রিয়। ডার্ক ওয়েব এমন একটি জায়গা যেখানে যে কেউ প্রবেশ করতে পারে না। এটাতে প্রবেশ করার জন্য টর ব্রাউজার(Tor Browser) এর প্রয়োজন হয়। এটা খুবই সিকিউর এবং শক্তিশালী ব্রাউজার। এইটার ব্রাউজার আপনার লোকেশন এবং তথ্যকে বাউন্স করে করে, আপনাকে ডার্ক ওয়েবের ভেতরে প্রবেশ করাবে। ডার্ক ওয়েব থেকে পৃথিবীর সকল রকমের ইললিগ্যাল কাজ করা হয়। এটা অনিওন রাউটার ব্যবহার করে। এখানে প্রবেশ করা যতটা সহজ আবার ততটাই কঠিন। কারণ হ্যাকাররা আপনার জন্যই অত পেতে বসে থাকে। আপনারা ডার্কওয়েবে পাইরেটেড মুভি, বিভিন্ন ধরনের ড্রাগস, নেশা জাতীয় দ্রব্য, ইললিগ্যাল যেকোনো প্রোডাক্ট (যেমন ধরুন, মোবাইল, মোটরসাইকেল, গাড়ি) এগুলো খুব সহজেই আপনার নিজের দেশে নিয়ে আসতে পারবেন। এটা সরকারকে পুরোপুরি ফাঁকি দিয়ে এবং কোনো প্রকার ট্যাক্স ছাড়াই।একাজগুলো যেহেতু ইললিগ্যালভাবে করা হয়, তাই ডার্ক ওয়েব কে একটা খারাপ স্থান হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

এখন প্রশ্ন হলো ডার্কওয়েবে ঢোকা কি ইললিগ্যাল?

না, ডার্ক ওয়েবে ঢোকা ইললিগ্যাল নয়। কিন্তু আপনি সেখানে যদি ইললিগ্যাল কাজ করেন তাহলে হবে সেটা অপরাধের মধ্যেই গণ্য হবে।

ডার্ক ওয়েব এর ওয়েবসাইট গুলোর লিঙ্ক কেমন হয়? ডার্ক ওয়েবের ওয়েবসাইটগুলোর শেষের এক্সটেনশন হলো ডট অনিয়ন (.onion)। আর এগুলোর ডোমেইনগুলো একেবারেই অন্যরকম হয়। যেমন ধরুন, আমি একটা ডোমেইনের নাম বললাম [https://gahk5bc0kmge33tajh843kb.onion] আসলে আপনারা কেউ বলতে পারেন কেউ হয় তো এখানে উল্টাপাল্টা কিছু লিখে চলে গেছে। আসলে সেই রকমই ধরে নিন। প্রতিটি ডার্ক ওয়েবের ডোমেইনের নাম এই রকমেরই হয়।

ডার্ক ওয়েব ব্যবহারের ক্ষেত্রে খুবই সর্তকতা অবলম্বন করা হয়। আপনার ডিভাইস খুবই সিকিউর করে রাখা হয়। কারণ খুব ভালো মানের সিকিউর লাইন ছাড়া ডার্ক ওয়েবে ঢোকা সম্ভব নয়।

আশা করি সবাই ডার্ক ওয়েব সম্পর্কে ভালো একটা ধারণা পেয়ে গেছেন।

Previous articleনজরুলের নিষিদ্ধ গ্রন্থ – বাংলা সাহিত্যের অনবদ্য সৃষ্টি।
Next articleবদর যুদ্ধ – বদর যুদ্ধের কারণ, ফলাফল ও শিক্ষা