সততা
সততা

 

সবসময় আমার কাছে মনে হয়েছে, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় কিছুটা জিনিসের কমতি আছে, শুধু বইয়ের পড়াই আসলে মুখ্য বিষয় নয়, শুধু লিখতে বা পড়তে পারাটাই মুখ্য বিষয় নয়, জীবন ঘনিষ্ঠ কিছু ব্যাপার রয়েই যায় যেগুলো আমাদের উচিত পাঠ্য-পুস্তকে অন্তরভুক্ত করা যা আমাদের জীবন চলার পথ আরও সুন্দর করতে পারে। আর যেহেতু আমাদের বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর পড়ালেখা ক্লাস সেভেন এইটের পর থেমে যায় তাই এই সময়ের মাঝেই ব্যাপারগুলো শিক্ষার্থীদের মাথায় ঢুকিয়ে দিতে পারলে একটা জেনারেশন পরেই মানে ২৫/৩০ বছর পরেই আমরা এর ফলাফল ভোগ করতে পারব বলে আশা করি। আমার এই ব্লগটি আসলে আমার জীবন থেকে নেয়া, একটা ডায়েরির মত হবে আশা করছি।

যেমন আমি নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের একজন সন্তান হিসেবে আমার জীবনে ঠেকে ঠেকে কিছু জিনিষ শিখেছি এর জীবন থেকে নেয়া ব্যাপারগুলোই আজকের ব্লগে পর্যায়ক্রমে লিখতে চাই, যদি কেও পড়ে আর তার কাজে লাগে সেই আশায়। এখানে হয়ত আমি বিচ্ছিন্নভাবে যখন যেটা মনে পড়ে, অনেক ঘটনা লিখব এবং সেখান থেকে সম্পূর্ণ আমার নিজস্ব মতামতের ভিত্তিতে একটা  উপসংহার টানার চেষ্টা করব। আমার মতামত ভুলও হতে পারে, প্রিয় পাঠক দায়িত্ব আপনার। শুরু করা যাক,

আমার প্রথম বিদেশ ভ্রমন

প্রথম দেশের বাইরে যাই ২০০৮ সালে, মালেশিয়াতে চাকুরির সুবাদে। যতদূর মনে পরে রাত একটায় মালেশিয়ান এয়ার লাইন্সে টিকেট করা ছিল। যে কোম্পানিতে মানে এল্কাটেল-লুসেন্ট এ যাচ্ছিলাম ঐ কোম্পানি টিকেট করে দেয়। আর টুরিস্ট ভিসা আমরা করে নেই নিজেরাই। ও হ্যা, সাথে ছিল আমার খুব কাছের এক বড় ভাই, নাম মনজুরুল ইসলাম ভাই (রুয়েট ৯৮ ব্যাচ মেকানিক্যাল)। মালেশিয়াতে ছিল আমার ক্লাসমেট সাইফুর রহমান জনি, ওই ওখানে আমাদের জবের ব্যবস্থা করে। এই ব্লগের মাধ্যমে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে নিচ্ছি।

মনজুর ভাইয়ের আগে একবার ট্রেনিং এ চায়না যাবার এক্সপেরিয়েন্স থাকলেও তা অনেক পুরানো, আর আমি আগে কখনই প্লেনে উঠিনাই। তাই, বাইরে যাওয়ার ফরমালিটিসগুলো আমাদের দুইজনের জন্যই কমবেশি নতুন। এয়ারপোর্টে কিভাবে ইমিগ্রেশন পার করতে হয়, কিভাবে ব্যাগেজ দিতে হয়, বোর্ডিং পাস কালেক্ট করতে হয়, কোন ফ্লাইট কোন গেট কিভাবে কোন দিকে যাব এসব ব্যাপারগুলো কিছুই আমার জানা ছিলনা আগে থেকে, মনজুর ভাই সাথে থাকার কারনে কোন সমস্যা হয়নি বাংলাদেশ এয়ারপোর্টে বোর্ডিং করতে। কিন্তু ওইপাশে মানে মালেশিয়ান এয়ারপোর্টে কিছুটা সমস্যা হয়। প্লেনে যাবার সময় আমরা বলাবলি করছিলাম সবাই যেদিকে যায় পিছে পিছে আমরাও সেই দিকে যাব, চিনি না তো কি হইছে?

ওখানে নেমে ইমিগ্রেশন আমাদের ছড়ছিলনা, আর আমরাও বুঝতে পারছিলাম না সমস্যাটা কোথায়? আমাদের সব কাগজপত্র থাকার পরেও তারা বলছিল, তোমাদের ভিসা হল টুরিস্ট ভিসা, রিটার্ন টিকেট কনফার্ম করা নাই, সুতরাং মালেশিয়ান এয়ারলাইন্সের বুথে যাও আগামী ৩০  দিনের মাঝে রিটার্ন টিকেট কনফার্ম করে নিয়ে আস। আর কোন সমস্যা নাই।

কথামত আমরা রিটার্ন টিকেট কনফার্ম করে ইমিগ্রেশন পার হয়ে বের হয়ে যাই। টোটাল ব্যাপারটা খুবই সিম্পল, কিন্তু আমরা দুইজনেই খুব টেনশনে পরে যাই কী করব তা নিয়ে। যাই হোক এয়ারপোর্টে আমাদের এজেন্ট অপেক্ষা করছিল আমাদের জন্য বের হয়ে তাকে পেয়ে যাই সে জিজ্ঞেস করছিল এত দেরি হল কেন বের হতে? তাকে বললাম ব্যাপারটা।

প্রথম বিদেশ যাত্রা বলে কথা, এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে এজেন্ট, যতদুর মনে পরে তার নাম আবাদুল, তার গাড়িতে সুবাং হাইটেক, আমাদের অফিস যেখানে সেখানে যাচ্ছিলাম প্রথমে। আর গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরের সৌন্দর্য দেখছিলাম আমি।

মনজুর ভাইয়ের মনে কি হচ্ছিল জানিনা, আমার বারবার একটাই কথা মনে হচ্ছিল। এত সুন্দর, এত গুছানো হয় কীভাবে একটা দেশ? আমার নিজের দেশ এত অগুছানো কেনরে ভাই। আমি নাহয় ২০০৮ সালে প্রথম এখানে আসলাম, আমার দেশের কত নেতা-নেত্রি, রথি-মহারথিরা সেই কত আগেই এসব দেশে ঘুরে গেছে, তারা কি এসব দেখে নাই? তারা কি দেখে নাই- কত সুন্দর করে গুছিয়ে একটা শহর পরিকল্পনা করা যায়?

ব্যক্তিগতভাবে, দেশে আমি যখন আমার কোন বন্ধুর বাসায় যাই, যেকিনা আমার চেয়ে কিছুটা টাকা-পয়সাওয়ালা, আমার ত মনে হয়, ইস ওর বাসাটা কী সুন্দর। সুযোগ পেলে, কিছু টাকা পয়সা হলে আমিও আমার বাসাটা ওরমত সুন্দর করে ফেলব।

সরকারের নেতা-নেত্রি, মন্ত্রিরা শুনি প্রায়সই বিদেশ ভ্রমন করেন। তাদের মনে কি এই বোধের উদয় হয়না। দেশটা তো তারও বাড়ি, বিদেশে আসার পর তার মনে হয়না একবারের জন্য- ইস কী সুন্দর করে এরা সাজিয়েছে! দেশে ফিরে আমার দেশটাও এভাবে সাজাব। তাদের ত এই সক্ষমতা আছে, তারাও তো চাইলেই পারে আমাদের দেশটাকে সুন্দর করে গুছাতে।

এরপরে, অফিস থেকে গেলাম আমাদের জন্য ঠিক করে রাখা এপার্টমেন্টে রেস্ট নেবার জন্য। অইদিনের মত দিলাম ঘুম। বলে রাখি, আমাদের এপার্টমেন্ট ছিল কুয়ালালামপুর, জালান উতারা, পেটালিং জায়া, এশিয়া জায়া স্টেশনের পাশে। এপার্টমেন্টের নাম দা ইস্তারা। ১৮ তালা বিল্ডিং এর তিন তলায়।

কিন্তু আমার মনে যে বিষয়গুলো ঘুরপাক খাচ্ছিল সেগুলো পয়েন্ট আকারে লিখে রাখি।

আমাদের দেশ থেকে যেহেতু অধিকাংশ শ্রমিক বিভিন্ন দেশে যায়, তাই আমাদের উচিত আমাদের পাঠ্যপুস্তকে কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা খুব জরুরী। এর মাঝে অন্যতম হতে পারে-

  • পাসপোর্ট কি, কীভাবে পাসপোর্ট করতে হয়? ভিসা কি, ভিসা কত প্রকার, ভিসা করতে কি কি কাগজ লাগে? আগে কত শুনেছি কত শ্রমিককে টুরিস্ট ভিসা ধরায়া দিয়ে লাখ টাকা নিয়া গেছে দালাল।
  • ইমিগ্রেশন কি? এখানে কি কি জিজ্ঞেস করতে পারে? কিভাবে ইমিগ্রেশন পার হতে হয়? প্লেনে উঠার আগে ধাপগুলো কি কি?
  • বোর্ডিং পাস কি? ব্যাগেজ বা লাগেজ কিভাবে জমা দিতে হয়? কি কি জিনিস হ্যান্ড ব্যাগে আর কি জিনিস লাগেজে নিতে পারবে?
  • বিমানে উঠার পর এবং নামার পরের আনুষ্ঠানিকতাগুলো কি কি? কিভাবে ইমিগ্রেশন পার হয়ে এয়ারপোর্ট থেকে বের হবে।
  • লিফট অথবা হাই কমোড ব্যবহারের নিয়ম কানুন। যেহেতু অধিকাংশ প্যাসেঞ্জারই আসে প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে।

পড়াশোনা করে সেই পড়াশোনা যদি বাস্তব জীবনে কাজেই না লাগলো, সেই পড়াশোনা করে লাভ কি? উপরের বিষয়গুলো পাঠ্যপুস্তকে থাকলে যেসব শ্রমিক দেশের বাইরে কাজে যায় তাদের বেশ কাজে দিবে বলে আমার বিশ্বাস। আর আমরা যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত তারা হয়তবা দুরু দুরু বকে পার পেয়ে যাই, কিন্তু আগে থেকে বইয়ে পড়া থাকলে আমাদেরও কনফিডেন্স লেভেল হাই থাকে।

এর পরে আসি নেতা নেত্রি আর এমপি মন্ত্রিদের কথায়, আমার হিসেবে এককথায় তাদের কোন দেশপ্রেম নাই। তারা একেকজন চোর। তা না হলে ৭১ সালে দেশ স্বাধীন হবার পরেই তাদের উচিত ছিল প্রপার প্লানিং করে আমাদের দেশটাকেও সাজিয়ে গুছিয়ে ফেলা। ৪৯ বছরেও তারা যেহেতু পারে নাই, তাই তারা আসলে চোর-বাটপার ছাড়া আর কিছুই না। তাদের ব্যাপারে আমার আরেকটি মতামত আরেকটি ব্লগে লিখে রেখেছি, চাইলে পড়তে পারে। নিচে লিংকে পাবেন।

ফেসবুক কমেন্ট- নেতাদের প্রতি আমাদের ভালবাসা এবং তার বহিঃপ্রকাশ।

আমি মোটামুটি সাত মাস ছিলাম মালেশিয়াতে। আরও অনেক কিছুই দেখেছি-শিখেছি-জেনেছি। পর্যায়ক্রমে আমার এক্সপেরিয়েন্স শেয়ার করব, সবই থাকবে আমার জীবন থেকে নেয়া । আজ এ পর্যন্তই থাকুক। ধন্যবাদ।

Previous articleফেসবুক কমেন্ট- নেতাদের প্রতি আমাদের ভালবাসা এবং তার বহিঃপ্রকাশ।
Next articleআমার জীবন থেকে নেয়া কিছু কথা পর্ব-০২ (প্রবাস জীবন)
যে ব্যর্থ সে অজুহাত দেখায়, যে সফল সে গল্প শোনায়। আমি অজুহাত নয় গল্প শোনাতে ভালবাসি। আসুন কিছু গল্প শুনি, নিজের গল্প অন্যকে শুনাই।

4 COMMENTS

  1. বন্ধু নস্টালজিক হয়ে গেলাম। কিন্তু আমার কই কই গেছি অনেক চেষ্টা করেই একটা জায়গার নামও মনে করতে পারলাম আর তুই কিনা বাসার নাম সহ মনে রাখছিস। চালিয়ে যা …। করোনা তোর ভিতরের প্রতিভা বের করেই ছাড়বে। আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো হইছে…।

    • ক্যামনে ক্যামনে জানি মনে আছেরে! এই লিখাটা আরও অনেক বড় হবে, পরের পারটগুলাও পড়িস। আর এটা পড়ার জন্য ধন্যবাদ।