ছোটবেলার গল্প

ছোটবেলার গল্প- ছোটবেলায় আমি মনে করতাম আমার অনেক বুদ্ধি, নিজেকে অনেক বুদ্ধিমান ভাবতাম। তাই অনেক কাজই আমি একটু বুদ্ধি খাটিয়ে করতে চাইতাম, জানিনা আমার বুদ্ধির জোড়ে নাকি কপালের দোষে আমার বুদ্ধি করে করা কাজগুলা শেষমেশ অনেকটাই গুবলেট পাকিয়ে যেত আর সবাই আমাকেই বোকা ভাবত।

প্রায় সময়ই আমি আমার বুদ্ধি কাজে লাগানোর কারনে নিজেই বেকুব হয়ে যেতাম। বড়রা হয়তবা আমাকে একটু হাবাগোবা টাইপেরই মনে করত, অনেক সময় দেখেছি তারা আমাকে নিয়ে আমার সামনেই হাসাহাসিও করত। আমি একটু লজ্জাই পেতাম। তাতে কী হয়েছে আমি আমার বুদ্ধির প্রয়োগ থামিয়ে দেইনি। বলতে লজ্জা নেই এখনও বুদ্ধি করেই কাজ করি।

আপনাদের সাথে শেয়ার করি কিছু ঘটনা।

ছোটবেলার গল্প- রোজার দিনে বরফ ক্রয়

১৯৮৭-৮৮ সালের দিকে ফ্রিজ ছিলনা আমাদের বাসায়। ঢাকায় যেই এলাকায় থাকতাম (এবং এখনও থাকি সেই এলাকায়) একটা বরফের ফ্যাক্টরি ছিল। এক টাকা দিলে আইস্ক্রিম সাইজের চার পিস বরফ দিত। রোজার মাসে ঐ বরফ দিয়ে আমাদের বাসায় শরবত বানান হত। মনে আছে, ঐ সময় রোজা অনেক বড় ছিল আর গরম ছিল সেই মারাত্মক। ইফতারের ৩০/৪০ মিনিট খানেক আগে আমার দায়িত্ব ছিল এক টাকার বরফ কিনে নিয়ে আসা।

ইফতারের আগে বরফের দোকানেও অনেক ভীড়। এক টাকা নিয়ে দৌড় দিয়ে আমি বরফ আনতাম প্রায়দিনই ভালই ভীড় ঠেলে। এত বেশি ভিড়!! তো আমি একটাকা হাতে নিয়ে বলতে থাকতাম “এক টাকার বরফ দ্যান, এক টাকার বরফ দ্যান……” বড় মানুষের ভীড়ে আমাকে পাত্তা দিতে চাইত না দোকানদার।

সবাই আগে বরফ নিয়ে তারপর টাকা দিত। আমি বুদ্ধি করে টাকাটা আগে দিতাম, যাতে দোকানদার আমাকে ভীড়ের মধ্যেও তাড়াতাড়ি বরফ দিয়ে দেয়। তাই টাকাটা আগেই আগায়া দিতাম। দোকানদার ব্যাটাও খপ করে টাকাটা নিয়ে নিত।

তো হল কি একদিন দোকানদার ব্যাটা আমার টাকা নিয়ে আর বরফ দেয়না। বলে যে, আমি নাকি টাকা দেই নাই, (হয়ত তার মনে নাই, ভুলে গেছে) । অনেকক্ষন কেও ম্যাও করার পর বাসায় চলে এলাম। এসে বাসায় ঘটনা বলার পর সবার সে কি হাসি আর তাচ্ছিল্য!! আমি নাকি বলদ- দোকান থেকে জিনিষ না নিয়েই টাকা দিয়ে চলে আসছি। বুঝেন অবস্থা?

অথচ কতদিন যে এই টেকনিকে বরফ কিনে আনলাম তার কোন দামই নাই।

ছোটবেলার গল্প- পালং শাক ক্রয়

কত সালের ঘটনা তা মনে নাই, কিন্তু তখন মোটামুটি বড়ই হয়ে গেছি। আম্মা পাঁচটাকা দিয়া বলছিল পালং শাক কিনে আনতে। তখন মনে হয় এক টাকা আঁটি। তো আমি তিন টাকা দিয়া তিন আঁটি শাক কেনার ইচ্ছা আমার। দোকানদার বলল-“কোনটা কোনটা নিবা বাইছা নেও”। আমি ভাবলাম, সব আঁটির যেহেতু দাম সমান- এই মোক্ষম সুযোগ আমার ক্ষুরধার বুদ্ধি কাজে লাগানোর। আমি বেঁছে বেঁছে বড় বড় পাতাওয়ালা তিন আঁটি পালং শাক নিয়ে বীরের বেশে বাড়ির দিকে রওয়ানা দিলাম।

বাসায় এসে দেখি আম্মা রান্না ঘরে রান্না করে। কালবিলম্ব না করেই আমি বিজয়ীর বেশে তিন আঁটি শাক আম্মার সামনে উপস্থাপন করলাম। শাকের দিকে এক ঝলক দেখেই আমার আম্মা আমার দিকে শাকের আঁটি ছুড়ে মারল- “এইগুলা কি আনছস? যা পালটায়া নিয়ায় তাড়াতাড়ি”।

সামান্য তিন টাকার শাক আমি যাব দোকানে আবার পাল্টায়া আনতে, এই আমি? কি মনে হয় আপনাদের? এ হতেই পারেনা। সোজা বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলাম- রাগে, দুঃখে, ক্ষোভে আর অপমানে। পাঁচ টাকা থেকে তিন টাকার শাক কেনার পরে পকেটে দুই টাকা ছিল। সিনেমায় দেখেছি আমার বয়সি কত ছোট ছোট পোলাপান বাসে পত্রিকা বেচে, আমিও তাই করব তাও জীবন থাকিতে আর এই বাসায় ফিরিব না।

এই ভাবতে ভাবতে যেদিকে দুই চোখ যায় সেদিকে হাঁটতে থাকলাম। (এই কাহিনী আরেকদিন লেখব, সারাদিন কি করেছি? কোথায় কোথায় ঘুড়েছি ইত্যাদি)

ছোটবেলার গল্প- এক টাকার প্রজাপতি ম্যাচ ক্রয়

ঐ সময় (১৯৮৭-৮৮ সালের দিকে) একটাকা দামের ম্যাচ পাওয়া যেত- নাম ছিল প্রজাপতি, সেনাপতি ইত্যাদি, থাকত ৪৮টি কাঠি এখনও মনে আছে। আবার আট আনা দামেরও ছিল- কাঠি কম থাকত। আকারে ছোট ছিল।

তো আম্মা আমাকে মাঝে মধ্যেই ম্যাচ কেনার জন্য দোকানে পাঠাত, বাসায় ম্যাচ না থাকলে। আমি ম্যাচ নিয়া আসার সময় ৩/৪ টা কাঠি জ্বালিয়ে নষ্ট করতাম। মজা লাগত। বাসায় আসার পর আম্মার কাছে ম্যাচ দিলেই আম্মা যা বলত তার সারমর্ম হল -দোকানদার আমাকে বলদ পেয়ে পুরান ম্যাচ গছিয়ে দিয়েছে। পরামর্শ দিত কেনার আগে হাতে নিয়া ঝাকি দিয়ে দেখবি কাঠি কম আছে নাকি? এই দ্যাখ দ্যাখ- ম্যাচের সাইডে গায়ে বারুদের ঘষা দাগ দেখিয়ে বলত এই ম্যাচ কতবার জ্বালাইছে। আর ঝাকি দিলেই ত বুঝা যায়। বলদ কোথাকার।

আমি বোকা বোকা ভাব নিয়া তাকায়া থাকতাম, যেন আমি আসলেই কিছু বুঝি নাই, দোকানদার আমাকে আসলেই বলদ পেয়ে প্রায় অর্ধেক খালি ম্যাচ গছায়া দিছে।

একদিন একটা প্রজাপতি ম্যাচ নিয়া বাসায় ফিরছিলাম। ৩/৪ টা কাঠি অলরেডি জ্বালায়া ফেলছি। ঝাকি দিয়া দেখি ঝনঝন করে। মানে আজকেও অনেক কথা শুনা লাগবে বাসায়। ভাবতে ভাবতেই আরেকটা কাঠি জ্বালায় ফেলছি। লাষ্টের কাঠিটা আমি আসলেই জ্বালাইতেই চাই নাই। মনের ভুলে অন্যমনষ্কভাবে জ্বালাইছিলাম।

বুদ্ধি করে সাথে সাথে কাঠিটা ফু দিয়া নিভায়া দিলাম। ঠিক মত না নিভতেই কাঠিটা ম্যাচ বাক্সের মধ্যে ঢুকিয়ে দিলাম। যাক ম্যাচটা একটু ভরা ভরা লাগতেছে এখন, কেও বুঝতে পারবেনা। সাথে সাথে ম্যাজিকের মত পুরা বাক্স আমার হাতের মধ্যে দুপ করে জ্বলে উঠল। ওমাগো বলে ছুড়ে ফেলে দিলাম।

বাসার সামনে এসে ঘুর ঘুর করতেছি, বাসায় কিভাবে ঢুকব এই চিন্তায় অস্থির। আজকে মাইর একটাও মাটিতে পরবেনা।

Previous articleবিট কয়েন কি ? কেন এত হইচই বিটকয়েন নিয়ে।
Next articleসার্চ ইঞ্জিন কিভাবে কাজ করে ?
Mamun
যে ব্যর্থ সে অজুহাত দেখায়, যে সফল সে গল্প শোনায়। আমি অজুহাত নয় গল্প শোনাতে ভালবাসি। আসুন কিছু গল্প শুনি, নিজের গল্প অন্যকে শুনাই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here