গুগল ড্রাইভ আনলিমিটেড স্টোরেজ

ইদানিং ফেসবুকে গুগল ড্রাইভ আনলিমিটেড স্টোরেজ বিক্রি করে যাচ্ছেন কিছু অসাধু লোকজন, কেও ২৫০ টাকা কেওবা ৫০০ টাকার বিনিময়ে। ব্যাপারটা চোখে পরার পরেই আমার মনে সন্দেহ হয়। একটু চেক করেই বুঝতে পারলাম এটা আসলে এক প্রকারের প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই না। অনেকে না জেনে না বুঝে টাকার বিনিময়ে এই সার্ভিস নিচ্ছেন যা কিনা সে নিজেই ফ্রিতে পেতে পারেন। আজকের এই ব্লগে আমি আপনাদের জানাব কিভাবে আপনি ফ্রিতে গুগল ড্রাইভ আনলিমিটেড স্টোরেজ পেতে পারেন। অযথা কেন প্রতারকদের ২৫০/৫০০/১০০০ টাকা দিবেন।

প্রথমে জানুন গুগল ড্রাইভ কি

গুগল ড্রাইভ হল ভার্চুয়াল ক্লাউড ড্রাইভ স্পেস যেখানে আপনি আপনার ইচ্ছামত ডাটা সংরক্ষন করতে পারেন এবং সেটা মোবাইল/পিসি/কম্পিউটার/ট্যাব ইত্যাদি যেকোন জায়গা থেকে এক্সেস করতে পারেন। জেনে রাখুন, প্রতিটি ইমেইল এড্রেস এর বিপরীতে গুগল তার ব্যবহারকারীকে ১৫ জিবি ডাটা স্পেস দিয়ে থাকে।

এই ১৫ জিবি স্পেসে আপনার ইমেইল, গুগল ফটোস ছাড়াও আপনি চাইলে ইচ্ছামত অন্যান্য ডাটা রাখতে পারেন। ১৫ জিবি শেষ হয়ে গেলে অতিরিক্ত স্পেস আপনাকে মাসিক বা বাৎসরিক পেমেন্ট দিয়ে কিনে নিতে হবে।

কত পেমেন্ট করতে হয়

অতিরিক্ত স্পেসের জন্য বিভিন্ন প্যাকেজ আছে। ব্যাসিক, স্ট্যান্ডার্ড আর প্রিমিয়াম প্যাকেজ। নিচের ছবিতে দেখুন। ১০০ জিবির জন্য মাসিক ১৫০ টাকা আর বাৎসরিক ১৬০০ টাকা। আবার ২০০ জিবির জন্য মাসিক ২৫০ টাকা আর বাৎসরিক ২৫০০ টাকা। ২ টিবির জন্য মাসিক ৮০০ টাকা আর বাৎসরিক ৮১০০ টাকা।

গুগল ড্রাইভ আনলিমিটেড স্টোরেজ
গুগল ড্রাইভ স্টোরেজ ট্যারিফ প্লান

তাহলে যারা ফ্রিতে গুগল ড্রাইভ আনলিমিটেড স্টোরেজ দিচ্ছে তারা কিভাবে দিচ্ছে? তারা কি নিজের পকেটের টাকা দিয়ে আপনার জন্য স্টোরেজ কিনে দিচ্ছে? মোটেই তা নয়।

কিভাবে ফ্রিতে আনলিমিটেড স্টোরেজ দিচ্ছে

প্রথমত আপনার জন্য যারা ফ্রিতে গুগল ড্রাইভ আনলিমিটেড স্টোরেজ ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন তারা আসলে শেয়ারড স্পেস দিচ্ছেন। এটা মোটেও আপনার মেইন ১৫ জিবি স্টোরেজের সাথে যুক্ত হচ্ছেনা।

এটা টীম শেয়ারড গুগল ড্রাইভ স্টোরেজ। গুগল বিভিন্ন স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এডুকেশনাল কাজে ব্যবহারের জন্য এই সুবিধা দিয়ে থাকে।

ধরুন আপনার বিশ্ববিদ্যালয় গুগলের কাছ থেকে এই সুবিধা পেয়েছে তাহলে আপনার বিশ্ববিদ্যালয় চাইলে এই স্টোরেজ অন্য যেকারও সাথে শেয়ার করতে পারবে। যাদের সাথে শেয়ার করবে তারাও একই সাথে আনলিমিটেড স্টোরেজ সুবিধা পাবে।

মূলত এভাবেই সারাজীবনের জন্য চাইলে যে কেও এই সুবিধা নিতে পারে।

আপনি কিভাবে ফ্রি গুগল আনলিমিটেড স্টোরেজ পাবেন সারা জীবনের জন্য

ব্যাপারটা আসলে ১ মিনিটের কাজ। প্রথমে এই সাইটে যান, নিচের মত উইন্ডো পাবেন।

গুগল ড্রাইভ আনলিমিটেড স্টোরেজ
এই ফর্ম পূরন করুন

আপনার শেয়ারড ড্রাইভের একটি নাম দিন, ইমেইল এড্রেস দিন তারপর কোন ইউনিভার্সিটি থেকে শেয়ারড ড্রাইভ পেতে চান তা সিলেক্ট করুন। এবার ক্যাপচা পূরন করে Get! বাটনে ক্লিক করুন। ব্যস হয়ে গেল। আপনিও এখন গুগল আনলিমিটেড স্টোরেজ পেয়ে গেলেন সারা জীবনের জন্য।

চেক করে দেখুন পেয়েছেন কিনা

আপনার গুগল ড্রাইভে যান দেখবেন নতুন একটি শেয়ারড ড্রাইভ যুক্ত হয়েছে নিচের ছবির মত। মেইন ড্রাইভ থেকে যেকোন ফাইল ড্রাগ করে এনে ছেড়ে দিন। মূল ড্রাইভ স্পেস ফাকা করে এখানে রেখে দিন।

গুগল ড্রাইভ আনলিমিটেড স্টোরেজ
শেয়ারড ড্রাইভটি খেয়াল করে দেখে নিন

বাড়তি সতর্কতা

মনে রাখবেন এটা আনলিমিটেড কিন্তু শেয়ারড ড্রাইভ। ড্রাইভের মূল মালিক চাইলে আপনার ফাইল দেখতে এবং চাইলে ডিলেট করে দিতে পারবে। তাই পার্সোনাল কোন ছবি কিংবা অতিরিক্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু এখানে না রাখাই ভাল। কি দরকার বিপদে পরার।

তবে যেকোন মুভি, গান, ছবি এখানে রাখলে তা নিরাপদ থাকবে আজীবন আশা করা যায়।

তাহলে যারা ড্রাইভ বিক্রি করছেন

পৃথিবীতে এরকম অসাধু লোক অতীতেও ছিল ভাই এখনও আছে, হয়ত ভবিষ্যতেও থাকবে। মানুষের না জানার কিংবা অসচতেনতার সুযোগ নিয়ে তারা একটা ফ্রি সার্ভিসকে ব্যবসায় রুপান্তর করেছে।

আর আমাদেরও উচিত যেকোন সার্ভিস নেয়া বা অনলাইন থেকে কিছু কেনার সময় একটু গুগল সার্চ করে নেয়া। তাহলে আর এই বিপত্তিতে পরতে হয় না।

অনেকেই দেখলাম কমেন্ট বক্সে লিখছেন যেহেতু পাসওয়ার্ড নিচ্ছেনা তাই এদের বিশ্বাস করা যায়। কি অপূর্ব যুক্তিরে বাবা। আমি বলি কি ভাই, নিজের মাথাটা আরেকটু খাটান, ওটা পুরোটাই খালি পরে আছে। গুগল ড্রাইভ আনলিমিটেড স্টোরেজ নিয়ে আপনার কি লাভ? খালি মাথাটা আগে ভরেন।

আর হ্যা, মনে রাখবেন, সামনের পৃথিবী হবে ডিজিটাল এবং অনলাইন আপনার একটু খানি ভুলে অনেক বড় খেসারত দিতে হতে পারে।

Previous articleডোমেইন নাম নির্বাচনের আগে অবশ্যই জেনে রাখুন
Next articleফ্রিল্যান্সিং কি ? ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে আপনার সকল প্রশ্নের উত্তর একসাথে।
যে ব্যর্থ সে অজুহাত দেখায়, যে সফল সে গল্প শোনায়। আমি অজুহাত নয় গল্প শোনাতে ভালবাসি। আসুন কিছু গল্প শুনি, নিজের গল্প অন্যকে শুনাই।