গুগল আপনার সম্পর্কে কি জানে?
গুগল আপনার সম্পর্কে কি জানে?

গুগল যে  বিশাল তথ্য সুমদ্র এখনকার সময়ে যেকোন ইন্টারনেট ব্যবহারকারি মাত্রই এটা স্বীকার করে নিতে বাধ্য। আমরা কোন কিছু না জানলেই গুগলে সার্চ দিতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। নিজের অজান্তেই আমরা গুগলের ওপর এতটাই নির্ভরশীল হয়ে গেছি নতুন বাচ্চার নাম ঠিক করার জন্যেও গুগলে সার্চ দেই। একথা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই গুগল সার্চ ইঞ্জিন আমাদের প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করে থাকে- তাই গুগলকে এক বিশাল তথ্য দৈত্য বললেও ভুল হবেনা। কিন্তু আপনি কি কখনও ভেবে দেখেছেন গুগল আপনাকে কতটুকু জানে?

আপনি নিজেকে যতটুকু জানেন ঠিক ততটুকু না জানলেও পৃথিবীর আর যেকারও চেয়ে সে যে আপনার সম্পর্কে বেশি জানে তা আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি। একটি সহজ প্রশ্ন করি, গত বছর ৭ জানুয়ারি আপনি কোথায় গিয়েছিলেন তা কি আপনার মনে আছে? ৭ জানুয়ারি খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ দিন না হলে আমি ১০০ ভাগ নিশ্চিতভাবে বলতে পারি আপনার মনে নেই, এমনকি মনে থাকার কথাও না। কিন্তু গুগল ঠিক মনে রেখেছে। শুধু মনেই রাখেনি সে পরিস্কারভাবে লিখে রেখেছে। শুধু তাই নয় গুগল আপনার সম্পর্কে আর কি কি জানে আজকে আমি আপনাদের কে জানাব।

আপনি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হন বা না হন- আপনার ব্যক্তিগত তথ্য আপনি কক্ষনই চাইবেন না অন্য কারও  কাছে যাক, আপনার সম্পূর্ণ এখতিয়ার আছে এইসব তথ্য গুগলকে না দেবার। এই ব্লগ পড়ে আপনি এটাও জানতে পারবেন কিভাবে আপনি গুগলের গুপ্তচরগিরি থেকে নিজেকে কিছুটা হলেও বাঁচাতে পারেন। প্রথমেই জেনে নেই গুগল আপনাকে কতটুকু জানে?

আপনার ডিভাইসের সার্চ ইতিহাস

আপনি জিমেইলে একটি একাউন্ট অবশ্যই খুলেছেন এবং লগইন করেছেন। এর পর থেকে আজীবন যতবার যত সার্চ করেছেন তার সব কিছুই গুগল সংরক্ষন করেছে সযতনে। কোন পেইজ কবে কতবার কতক্ষন দেখেছেন সবই। আর ব্রাউজার হিসেবে গুগল ক্রোম ব্যবহার করলে ত কথাই নেই। কি বিশ্বাস হচ্ছেনা। তাহলে https://myactivity.google.com/myactivity এই পেইজে গিয়ে আপনি নিজেই দেখতে পাবেন। কবে, কখন কোন পেইজ ভিজিট করেছেন। ও হ্যা মনে রাখবেন একই সাথে গুগল এটাও ট্রাক রেখেছে আপনি ইউটিউবে (ইউটিউবের মালিকানাও গুগলের) কোন কোন ভিডিও দেখেছেন। উপরের দেয়া লিংকে আরও একটু গুতাগুতি করেন মোটামুটি ভাল একটা আইডিয়া পেয়ে যাবেন। আপনি যদি গুগলের এই খবরদারি না চান Activity Controls এ গিয়ে রেস্ট্রিক্টেড করে দিতে পারেন। আপনার জানার উৎসাহ হতেই পারে গুগল কেন এই তথ্যগুলো সংরক্ষন করে? খুব সহজ ব্যাপার। গুগল আসলে চায় আপনার সম্পর্কে একটা ধারণা করতে। আপনার শখ, আপনার পছন্দের বিষয়গুলো জানতে।এসব জেনে তার কি লাভ?

মজার ব্যাপার তাই না? আপনি নেটে কি খুজছেন, কোন কোন বিষয় দেখছেন এগুলোর উপর ভিত্তি করে সে আপনাকে আপনার পছন্দের বিষয়ে বিজ্ঞাপন আপনাকে দেখাবে। বিশ্বাস না হলে ২/১ দিন কক্সবাজারের হোটেল নিয়ে সার্চ করে দেখুন- এরপর আপনাকে গুগল ক্রোম অনলাইন হোটেল বুকিং এর বিজ্ঞাপন দেখাবে। গাড়ি নিয়ে সার্চ করে দেখুন সে আপনাকে গাড়ির বিজ্ঞাপন দেখাবে। গুগল আপনাকে কতটুকু জানে? কিছুটা হয়ত আঁচ করতে পারছেন, তাইনা?

গুগলের O দুটো আমার কাছে দুইটা চোখের মতই মনে হয়
গুগলের O দুটো আমার কাছে দুইটা চোখের মতই মনে হয়

আপনি কোথায় কোথায় যাচ্ছেন

আপনার এন্ড্রোয়েড ফোনে লোকেশন অন রেখে আপনি গুগলকে এই ইনফরমেশন দিয়ে যাচ্ছেন অনবরত। আপনি কোথায় কোথায় যাচ্ছেন, কতক্ষন থাকছেন- এসব ইনফরমেশন আমরা নিজেরাই দিচ্ছি গুগোলকে। রাস্তায় ট্রাফিক কেমন আছে এই ইনফরমেশন গুগল ম্যাপ আমাদের দেখাচ্ছে তার অনেকটাই আমাদের মোবাইল ডিভাইস থেকে নিয়ে আমাদের দিচ্ছে। রাস্তার ট্রাফিক লোড, কতক্ষন দেরি হবে বা কখন পৌছাব ইত্যাদি। এখান থেকে গুগল আপনার প্রতিদিনের জীবন যাপন, পছন্দের-অপছন্দের একটা ধারণা পেয়ে যাচ্ছে। মোবাইলের লোকেশন হিস্ট্রি থেকে সে এই ইনফরমেশন নিচ্ছে। আপনি চাইলে প্রয়োজনের সময় ছাড়া লোকেশন অফ রাখতে পারেন। পাশাপাশি অটো ডিলিট ফিচার সময়সীমা ঠিক করে তিন কিংবা আঠারো মাসের পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডিলিট হতে থাকবে।

আপনার এন্ড্রোয়েড ডিভাইসের ফটো গ্যালারি

আপনি যেদিন এন্ড্রোয়েড ফোন কিনেছেন সেদিন থেকে যত ছবি তুলেছেন সব ছবি গুগল সযতনে Google Photos এ সংরক্ষন করে রেখেছে। Google Photos এ ঢুকে দেখে আসতে পারেন। এর মাঝে আপনি হয়ত মোবাইল হারিয়ে ফেলেছেন, নতুন ফোন কিনেছেন কিন্তু জিমেইল আইডি যদি সেম থাকে সব ছবি আপনি আবার ফেরত পেতে পারেন।একারনে আমি আপনাকে অনুরোধ করব ব্যক্তিগত ছবি মোবাইলে না তোলার। গুগল চাইলেই আপনার ছবি দেখতে পারে। আপনার মোবাইলে তোলা আপনার ব্যক্তিগত ছবি কুক্ষিগত করার জন্য শুধুমাত্র আপনার ইমেইল আইডি আর পাসওয়ার্ডই যথেষ্ট। অতএব সাবধান। সবচেয়ে ভাল হয় আপনি যদি গুগল ড্রাইভে আপনার ছবি আপ্লোডের অপশন বন্ধ রাখেন। এতে গুগল আপনার ছবি অটো আপ্লোড করা থেকে বিরত থাকবে। এমনকি গুগল চাইলে আপনার মোবাইলের ক্যামেরা কিংবা মাইক্রোফোনের নিয়ন্ত্রণও নিতে পারে। অনেক এপ্সকেই আপনি এই পারমিশন দেন ইন্সটল করার সময়। গুগল আপনাকে কতটুকু জানে? এই প্রশ্নের উত্তরে ফটো গ্যালারি অংশটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

গুগলের নজর থেকে বাঁচার কি উপায়?
গুগলের নজর থেকে বাঁচার কি উপায়?

 আপনার এন্ড্রোয়েড ডিভাইসের সর্ট ম্যাসেজ এবং ফোন কল

গুগল চাইলেই আপনার মেসেজ পড়তে পারবে, আপনার ফোন কলের হিস্ট্রিও দেখতে পারবে। আপনার ভয়েস কলও শুনতে পারবে। বিশ্বাস না হলে একটু গুগল করে দেখতে পারেন। হাহাহাহা……

আপনার এন্ড্রোয়েড ডিভাইসের এপ্স

গুগল চাইলেই আপনার ডিভাইসে কি কি এপ্স ইন্সটল করা তা জেনে নিতে পারে। কোন কোন এপ্স আপনি কতক্ষন ইউজ করছেন, কোন এপ্স আপনার মোবাইল থেকে কি কি তথ্য নিচ্ছে সবই জানতে পারবেন। মোটকথা গুগল আপনার অগোচরে আপনাকে সবসময় চোখে চোখে রাখছে। সার্বক্ষণিক গুপ্তচরগিরি করেই যাচ্ছে। আপনার একটা প্রোফাইল সে তৈরি করে রাখছে তার ব্যবসায়িক সুবিধার্থে। গুগল ভয়েস এসিস্ট্যান্ট তাকে দেয়া সব ইন্সট্রাকশন সযতনে সংরক্ষন করছে আপনার অগোচরেই। এটাও আপনি চাইলে https://myactivity.google.com/myactivity থেকে কন্ট্রোল করতে পারেন।

আপনার পার্সোনাল ইনফরমেশন

জিমেইল একাউন্ট খোলার সাথে সাথেই এই তথ্যগুলো আমরা গুগলকে দিয়ে থাকি, নাম, জন্মতারিখ, মোবাইল নম্বর, বাসার ঠিকানা ইত্যাদি।এগুলো খুবই সাধারণ ব্যাপার মনে করলেও- বিশ্বাস করুন আর নাই করুন শুধু এই তথ্য দিয়েই গুগল কোটি কোটি ডলার আয় করছে। আপনার কাছে যদি ৫/৬ লক্ষ এক্টিভ ইমেইল এড্রেস এবং ফোন নাম্বার থাকে আপনিও মাসে লাখ লাখ টাকা আয় করতে পারবেন। ভাবছেন কিভাবে? ইমেইল/ম্যাসেজ/ভয়েস কল মানে ডিজিটাল মার্কেটিং করে।

পরিশেষে

গুগলের অনেক ছোট ছোট এপ্স বা ফিচার বা Widget আছে যেগুলো আমরা ব্যবহার করে থাকি সেগুলোও তাদের প্রয়োজন মত ইনফরমেশন নিয়ে নিচ্ছে আমার আপনার কাছ থেকে। কয়েকদিন আগে হঠাত আমি একটা নোটিফিকেশন দেখলাম আমার ফোন আমাকে জানাচ্ছে কয়েকঘন্টা পর আমার ফ্লাইট, আমাকে এয়ারপোর্ট যেতে বলছে রাস্তায় ট্রাফিক ভলিউম হাই। অবাক হচ্ছেন? আমি যখনই অনলাইনে আমার টিকেট কেটেছি এয়ারলাইন্স আমাকে বুকিং কনফার্মেশনের একটা মেইল দিয়েছে। পিডিএফ ফাইল এটাচমেন্ট হিসেবে। গুগল সেই এটাচমেন্ট থেকে আমার ফ্লাইট ইনফরমেশন নিয়ে আমাকে জানাচ্ছে। ভাবতে পারেন? সে কতটুকু গুপ্তচরগিরিতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে?

এছাড়াও মাঝে মাঝেই আমরা দেখি গুগল আমাদের জানিয়ে দেয় আগামীকাল ওয়েদার খারাপ থাকবে আমি যেন অবশ্যই ছাতা নিয়ে বের হই। সে জানল কি করে আমি কাল বের হব? কারণ সে আমার প্রতিদিনের এক্টিভিটি ট্র্যাক করছে, ডাটা এনালাইসিস করছে প্রতিনিয়ত। গুগলের আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স অনেক হাই। তার এনালিটিক্যাল পাওয়ার অনেক বেশি। প্রতিনিয়ত গুগল আপনাকে আমাকে নিয়ে এনালাইসিস করেই যাচ্ছে। আমরা সবাই গুগলের মার্কেটিং প্রোডাক্ট। নিচের ছবিতে দেখুন ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকারবারগের ল্যাপটপের ক্যামেরা স্টিকার দিয়ে ট্যাপ করা যাতে কেও হ্যাক করে তার ছবি তুলতে না পারে। এই ছবিটি আরো ৫/৭ বছর আগের।

মার্ক জুকারবারগ
মার্ক জুকারবারগের ল্যাপটপের ক্যামেরা টেপ দিয়ে ঢাকা

১৯৯৯ সালে যখন প্রথম কম্পিউটার কিনি তখন একটা ফিচার পড়েছিলাম- আগামী দুনিয়াটা হবে তথ্য বা ইনফরমেশনের যুগ। যার কাছে যত তথ্য থাকবে সে তত ধনী। ব্যাপারটার বাস্তব প্রমান এখন গুগল।

আশা করি গুগল আপনাকে কতটুকু জানে?-এই প্রশ্নের উত্তর অনেকটাই পেয়ে গেছেন।

আমার এই ব্লগ ভালোলাগলে কমেন্টে আপনার ভাললাগা জানিয়ে যেতে পারেন। ফেসবুকে শেয়ার করে অন্যদেরকে জানাতে পারেন। আপনাদের কমেন্ট কিংবা শেয়ার আমাকে আরও উৎসাহিত করবে ব্লগ লেখার ব্যাপারে। ধন্যবাদ ব্লগটি পড়ার জন্য।

করোনা ভাইরাস নিয়ে আমার এই ব্লগটিও পড়ে দেখতে পারেন। এখন পর্যন্ত এটা আমার ব্লগের সর্বাধিক পঠিত ব্লগ।

Previous articleক্রেডিট কার্ড- আধুনিক সুদি মহাজন, সাবধান হোন
Next articleপাসওয়ার্ড কিভাবে আরও সিকিউরড করবেন?
যে ব্যর্থ সে অজুহাত দেখায়, যে সফল সে গল্প শোনায়। আমি অজুহাত নয় গল্প শোনাতে ভালবাসি। আসুন কিছু গল্প শুনি, নিজের গল্প অন্যকে শুনাই।

2 COMMENTS