খেতে খেতে ৮টি আম খেয়ে ফেলেছি
খেতে খেতে ৮টি আম খেয়ে ফেলেছি

 

আজকের পত্রিকার বিনোদন পৃষ্ঠায় একখানা চাঞ্চল্যকর নিউজ আজ ছাপা হইয়াছে, প্রিন্টেড ভার্সনে তাহা আছে কিনা আমার জানা নাই কিন্তু ফেসবুকের কল্যাণে অনলাইন পত্রিকার খবরটি আমার নজরে আসিয়াছে। আমার সামনে দিয়ে ঘুরিতে থাকা সেই খবরের লিংকখানা  সারাটিদিন ক্লিক না করিলেও বিকাল ৫ ঘটিকায় ক্লিক করিলাম, আসলে ক্লিক করিতে একপ্রকার বাধ্য হইলাম বলা যায়। নিউজে ২০হাজার রিয়াকশন, ৬ হাজারের উপর কমেন্ট আর ৮৮১ শেয়ার দেখিয়া ভাবিলাম নির্ঘাত কোন জনগুরুত্বপূর্ণ খবরই হইবে। তাহার উপর এক লাস্যময়ীর ছবিও  রহিয়াছে যাহা আমাকে আকর্ষণ করিয়াছে- বলিতে দ্বিধাবোধ করিতেছি না। আম খাইতে যাইব ভাবিতেছিলাম কিন্তু এই নিউজ না পড়িয়া যাই কিভাবে?

যাই হউক, ক্লিক করিবার পূর্বেই দুইটি জিনিষ আমার নজরে পরিয়াছে, একখানা আগেই বলিয়াছি- লাস্যময়ী ললনা। আরেকখানা হইল সংবাদের শিরোনাম। আহা কি মধুর! কি চমৎকার! কি সাহিত্যিক শিরোনামরে বাবা। আমি অবাক হইয়া কিছুক্ষন শিরোনামের দিকে চাহিয়া রইলাম। সংবিত ফিরিয়া পাইতেই বুঝিলাম তাহার কি মর্ম।“খেতে খেতে ৮টি আম খেয়ে ফেলেছি”। আহা পাঠক ভাবুনতো ব্যাপারখানা একটিবার। শিরোনামে আছে রস, খাটি আমের রস। পাঠকের জন্য আর কিবা চাই?

ক্লিক করিয়া ভিতরে ঢুকিতেই আমার চক্ষু আবারও ছানাবড়া, পুরা পর্দা জুড়িয়া কাল কাপড় আর হাতা-কাটা ব্লাউজ পড়িহিতা রমণী, প্রশান্তি আর কাহাকে বলে? নিউজ পড়িবার আর দরকার নাই, এরকম কিছু স্থিরচিত্র দিলে পাঠকের আর কিবা চাহিবার থাকে?

স্ক্রল করিতেই নিউজের শুরু হইয়া গেল।বাহ বাহ কি চমৎকার স্টারটিং। নায়িকাকে ফোন করিয়াই প্রথমে জিজ্ঞাসা করিয়াছেন, একটি আম বেশি খাইলে কী এমন ক্ষতি হয়? প্রশ্ন শুনিয়া নায়িকা ত নায়িকা আমি নিজেই স্তব্ধ। নায়িকা নাকি এক মুহূর্ত কোন কথাই বলিতে পারেন নাই। আমি হইলে ত আপনি ভুল নম্বরে কল করিয়াছেন বলিয়া কাটিয়া দিতাম। নায়িকাকে আমার যথেষ্ট ভদ্র মনে হইল। এক মুহূর্ত অতিবাহিত করিয়া তিনি উপস্থিত বুদ্ধি খাটাইয়া জবাব দিয়াছেন। নাইলে কি আর তিনারা নায়িকা?

নায়িকা নাকি হাসিতে হাসিতে জবাব দিয়েছেন যে তিনি উহা মজাক করিয়া লিখিয়াছিলেন। তিনি প্রকৃতপক্ষে একসাথে খুব বেশি আম খাইতে পারেন না, আর এখনকার করোনা ভাইরসের সময়ে তিনি শুটিং করিতেছেন না তাই বাসায় বসিয়া বসিয়া তিনি বোর হইতেছেন। বোর কাটাইতে উনার বেশি বেশি খাওয়া হইতেছে। গতকাল প্রথম তিনি একসাথে ৮খানা আম খাইয়াছেন। বাসায় বসিয়া থাকিতে থাকিতে, খাইতে খাইতে তাহার ওজন বাড়িয়া যাইতেছে। তাহার ওজন কত তাহা নিয়া তিনি কিংবা সাংবাদিক মহাশয় কোন মন্তব্য করেন নাই আর আগ্রহও দেখান নাই।

এতক্ষনে সংবাদের শিরোনামের নামকরনের স্বার্থকতা কিছুটা খুজিয়া পাইলামরে বাবা। সাংবাদিক মহাশয়কে কেন জানি আর তেমন দোষ দিতে পারিতেছি না। ৮টি আম খাওয়ার মত আশ্চর্য ঘটনা এই দেশে আর কয়বারই বা ঘটিয়াছে বছরে, একবার ভাবুন ?

তারপর নায়িকার ফেসবুকের যেই স্ট্যাটাসের উছিলা ধরিয়া সাংবাদিক মহাশয় এই সুন্দরী নায়িকাকে ফোন করিয়াছেন তাহার হুবুহু কপি ছাপাইয়া দিয়াছেন তাহার পাঠককুলের জন্য। স্ট্যাটাসে নায়িকা লিখিয়াছেন, তাহার সেদিন জিম ছিলনা, সন্ধ্যার তিনি বোর হচ্ছিলেন- মনটাও একটু খারাপ ছিল। অতঃপর তিনি ভাবিলেন এবং ভাবিয়া বাহির করিলেন কিছুই যখন করিবার নাই- কিছু তো খাইতে পারেন। অতঃপর তিনি দেখিতে পাইলেন, নতুন আম আনা হইয়াছে, খাইলেন। খাইতে খাইতে উনি যখন ৮টি আম সাবার করিয়া ফেলিয়া দিয়াছেন ঠিক তখনই তিনি আবারও দেখিলেন কেমন কেমন যেন বোধ হইতেছে তাহার। তখনই তিনি সারমর্মে পৌঁছাইয়া গেলেন এবং জাতির উপকারের স্বার্থে এক মহা মহা উপদেশ কাম হেলথ টিপস প্রসব করিলেন- এক বসায় কেহ যেন ৭টির বেশি আম না খান। শরীর খারাপ হইতে পারে।-বুঝতে পারলেন ব্যাপারটা।

আহা সাংবাদিক, তাহাকে আর কী দোষ দিব? কেন তিনি ফোন করিয়া প্রথমেই নায়িকাকে জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন একটি আম বেশি খাইলে কী এমন বিশেষ ক্ষতি হয়? এইবার আমার বোধগোম্য হইল। সাধু সাধু। সাংবাদিকের প্রতিটা জট আমি শারলোক হোমসের মত খুলিয়া যাইতেছি। বাহ চমৎকার।

এরপর সাংবাদিক নায়িকার ভক্তদের উদ্দেশ্যে জানাইলেন নায়িকার প্রিয় আমের জাতের তালিকা, কি নাই সেই তালিকায়? চারটি জাত উল্লেখ করার পর তিনি উল্লেখ করিয়াছেন নানা জাতের শব্দটি। এতে বুঝা যায় সকল ধরনের আমই তাহার বিশেষ প্রিয়। নায়িকার সহকর্মী এবং বন্ধুরাও একথা জানেন। না জানিলেও আজিকার সংবাদের পর জানিয়া নিবেন আশা করি। সহকর্মী এবং বন্ধুরা তাকে উপহার হিসেবে আম পাঠান।

এরপর নায়িকার নিজের মুখের বয়ান উল্লেখ করিয়াছেন সাংবাদিক সাহেব। নায়িকা বলেন, তাহার আমের প্রতি ভালবাসার কথা অনেকেই জানেন, সেজন্য তিনি আম উপহার হিসেবে পেয়ে থাকেন। অনেকের সাথে শুটিং করিতে করিতে সম্পর্ক এখন অনেকটা পরিবারের মত, অনেকে তাই তাহাকে আম উপহার পাঠাইতেছেন। শুটিং এ যাইতেছেন না তাই তিনি এখন আম খাইয়াই সময় কাটাইতেছেন। তাহার ভক্তরা চাইলে উনাকে অনুসরন করিতে পারেন। সময় না কাটিলে আম খাইয়া সময় কাটাইতে পারেন এই লকডাউনে।

এরপর সাংবাদিক মহাশয় আরও একখানা ছবি সংযুক্ত করিয়াছেন। আম খাওয়ার পরের ছবি হইবে বোধ করি। ছবিটা অনেক রস সমৃদ্ধ মনে হইতেছে। বাকি খবর পড়িব নাকি ছবি দেখিয়া যাইব ভাবেতেছিলাম। কিছুক্ষন ছবি দেখিয়া খবরের বাকি অংশ পড়িবার মন স্থির করিলাম।

সাংবাদিক নায়িকাকে জিজ্ঞেস করিলেন, অনেকেই শুটিং করিতেছেন, নায়িকা কেন করিতেছেন না। আম খাইয়া কি উনি সময় পাইতেছেন না? উত্তরে আমাদের প্রিয় নায়িকা বেশ বুদ্ধিমত্তার সাথে জবাব দিয়াছেন এবং বাস্তব অবস্থা সাংবাদিকের সামনে তুলিয়া ধরিয়াছেন। তিনি পরিস্কার জানিয়া দিয়াছেন সিচুয়েশন কোন দিকে যাইতেছে তাহা কেহ জানেনা, প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ আক্রান্ত হইতেছে তাই শুটিং এ যাওয়াকে তিনি নিরাপদ মনে করিতেছেন না। তিনি তার মায়ের শারীরিক অবস্থার বর্ণনা করিয়া বলিয়াছেন তিনি তার পরিবার নিয়ে বিশেষ চিন্তিত এবং তিনি তার পরিবারকে নিয়ে রিস্ক নিতে চাইতেছেন না। নায়িকার বাস্তবধর্মী কথা আমাকে সত্যই মুগ্ধ  করিয়াছে এবং তাহার মায়ের প্রতি ভালবাসা আমাকে স্পর্শ  করিয়াছে।

আবারও তিনি নায়িকার একটি ছবি সংযুক্ত করিয়াছেন। দুই লাইনের এক নিউজ তিনি টানিয়া যেমন লম্বা করিতেছেন তেমনি একের পর এক ছবি সংযুক্ত করিয়া যাইতেছেন। এবার আর ছবির দিকে না তাকাইয়া খবর খুজিতে লাগিলাম। সাংবাদিক নায়িকাকে প্রশ্ন করিয়াছেন, বাসায় নায়িকার সময় কিভাবে কাটিতেছে। নায়িকা যদিও একবার এই কথার উত্তর দিয়াছেন, তিনি আগেই বলিয়াছেন আম খাইয়া তিনি সময় কাটাইতেছেন। আবারও একই প্রশ্ন করিয়া সাংবাদিক বেকুবের মতই কাজ করিয়াছে বলিয়া আমার ধারনা। কিন্তু না, নায়িকার এবারের উত্তর সম্পূর্ণ ভিন্ন।

নায়িকা জানাইলেন তিনি খাইয়া, ঘুমাইয়া, টিভি দেখিয়া, বই পড়িয়া, জিমে যাইয়া আর মায়ের সাথে গল্প করিয়া সময় কাটাইতেছেন। আম খাওয়ার কথা তিনি আলাদা ভাবে উল্লেখ না করিলেও প্রথমেই তিনি খাওয়ার কথাই বলিয়াছেন।আমি কিছুটা স্বস্থি পাইলেও সাংবাদিক সাথে সাথে ধরাইয়া দিলেন নিরাপত্তার কথা বলিয়া শুটিং এ যাচ্ছেন না কিন্তু জিমে ঠিকই যাচ্ছেন। হুম! কাজে ফাকি মারিবার আর স্থান পাইতেছেন না বুঝি?

আমাদের নায়িকাও বেশ বুদ্ধিমান, আবার সাথে সাথে বলিয়া দিলেন, তিনি যেই জিমে যান তাহার করতিপক্ষ সর্বোচ্চ সচেতন। কোন সমস্যা নাই তাহাতে। নায়িকা সাথে ইহাও উল্লেখ করিয়াছেন, উনার ডায়াবেটিস আছে এটাকে নিয়ন্ত্রন করিতেই জিম আর এখন রাস্তায় হাটার চেয়ে জিমকেই তিনি নিরাপদ মনে করিতেছেন।

এইখানে ঠুস করিয়া প্রতিবেদন শেষ হইয়া গেল। আহা আরও একটু যদি থাকিত এমন কি ক্ষতি হইত? ছবি তিনটি আবার কিছুক্ষন সময় ধরিয়া দেখিয়া আমিও এই পেইজ রেখে বাহির হইয়া গেলাম বাসায় আম আছে কিনা খোঁজ নিতে। ৭ টির বেশি আম খাইবনা এক বসায়।আরও খাইতে মন চাহিলে উঠিয়া দাড়াইয়া পরে আবার বসিয়া খাইব। এই সূত্রের মহত্ব ভাবিতে লাগিলাম।

ইহা নিছকই একটি রম্য রচনা, জীবিত কাহারো সাথে ইহার কোন সম্পর্ক নাই। কেহ যদি জীবিত কাহারো সাথে কোন সম্পর্ক পাইয়া থাকেন, তাহা তার নিজস্ব মতামত বলিয়া গন্য হইবে।

Previous articleব্লগ থেকে ইনকাম কেমন আর আমি কেন ব্লগিং করি
Next articleড্রপবক্স কি এবং ড্রপবক্স ব্যবহার করে কি কি সুবিধা পাওয়া যায়।
যে ব্যর্থ সে অজুহাত দেখায়, যে সফল সে গল্প শোনায়। আমি অজুহাত নয় গল্প শোনাতে ভালবাসি। আসুন কিছু গল্প শুনি, নিজের গল্প অন্যকে শুনাই।

5 COMMENTS

  1. সাধু ভাষা ব্যবহার করিবার কারনে রম্য রচনাটিতে সৈয়দ মুজতবা আলীর স্বাদ পেলুম বন্ধুবর মামুন ❤️