শিশুদের ত্বক বিভিন্ন মাধ্যম দ্বারা সংক্রমিত হতে পারে। আর তেমনি শিশুদের এক ধরনের চর্মরোগ হচ্ছে একজিমা। একজিমা যে শুধু বড়দের হবে ব্যাপারটা ঠিক তেমন নয়। বরং শিশুরাও একজিমা বা অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিস রোগে আক্রান্ত হতে পারে ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি বেশ আতঙ্কের ব্যাপার। কারন পৃথিবীতে প্রত্যেক ৫ জনের ১ জন এই রোগে আক্রান্ত হয়। একজিমা রোগে আক্রান্ত হওয়া স্থানটি শুকনো হয়ে আসে, ত্বক খসখসে হয় এবং খুব চুলকায়। তার পাশাপাশি একজিমা আক্রান্ত স্থানটি লাল বর্ণ ধারণ করে।
একজিমা বংশগত একটি রোগ । মূলত চামড়ার স্পর্শকাতরতাটি বংশগত। এবং সেই কারণেই এই ধরনের চামড়ার অধিকারী শিশুদের অ্যাজমা রোগে আক্রান্ত না হওয়া সত্বেও সহজেই চুলকানি হতে পারে।
পৃথিবীতে আজ পর্যন্ত একজিমা রোগ নিরাময়ের কোন উপায় বের হয়নি। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে ওষুধের মাধ্যমে এটি দমিয়ে রাখা সম্ভব। যদিওবা আমাদের দেশে একজিমার চুলকানির জন্য পারিপার্শ্বিকতা বেশি দায়ী ।চামড়ার শুষ্কতার কারণে একজিমা রোগ ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।
ঔষধ নিয়ে বাড়াবাড়ি করবেন না-খুব ছোট বাচ্চার ঔষধ নিয়ে পরামর্শ এখানে পড়ুন।
একজিমা রোগের লক্ষণসমূহ
- ত্বকের উপর ফুসকুড়ি বা ফোসকা পড়ে।
- ধীরে ধীরে আক্রান্ত স্থান থেকে হলুদ রস বের হয় ।
- ত্বক লাল হয়ে আসে ।
- প্রচন্ড চুলকানি হয়।
- রক্ত চলাচল করতে না পারায় পুজ বেরোনোর স্থান তৈরি হয় ।
- একজিমা রোগ শিশুদের ইমিউন ব্যবস্থাকে অনেকাংশে প্রভাবিত করে। যার কারণে শিশুদের হাচি ,কাশি ,সর্দি ইত্যাদি লেগেই থাকে।
যদি একজিমার লক্ষণ এর ভেতর কোন একটি লক্ষণ প্রকাশ পায় তাহলে সময় অপচয় না করে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
একজিমা প্রতিরোধের পদ্ধতি
- বাড়ির আবহাওয়া পরিষ্কার এবং ধুলা মুক্ত রাখতে হবে।
- বাচ্চার খাদ্যাভাস একজিমার একটি বড় কারণ হতে পারে। সুতরাং খাদ্যাভাসে কোন ধরনের পরিবর্তন করলে দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে ।
- সব সময় সুতির কাপড় ব্যবহার করতে হবে। উলের কাপড় ব্যবহার করলে ত্বকের সাথে ঘষা লাগে এবং শুষ্কভাব বেড়ে যায় ।সিনথেটিক কাপড় এড়িয়ে চলাই ভালো।
- সাধারণত ফুসকুড়ি দেখা দিলে বাইরের ত্বকে স্টেরয়েড লাগানো হয় । কারণ এটি ফুসকুড়ি সাথে সাথে প্রশমিত করতে সহায়তা করে। তবে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়াটাই ভালো।
- এলার্জি জাতীয় খাবার গুলো থেকে বিরত থাকতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ,শিশুকে কোন ধরনের খাবার খাওয়ালে একজিমার উপসর্গগুলো বেড়ে যায় সেই ধরনের খাবার থেকে শিশুকে বিরত রাখতে হবে।
- যদি একজিমা রোগ তীব্র আকার ধারণ করে তাহলে বাচ্চাকে দিনে ৫থেকে ১০ বার পাতলা জীবানুনাশক রাসায়নিক পদার্থ মিশ্রিত পানিতে গোসল করাতে হবে।
স্টেরয়েড ব্যবহার করা কি শিশুর ত্বকের জন্য ক্ষতিকর?
সকল ওষুধ প্রয়োগের একটি সীমিত মাত্রা রয়েছে। যেখানে প্যারাসিটামল এর কাজ রয়েছে সেখানে প্যারাসিটামল ব্যবহার করতে হবে। যেখানে এন্টিবায়োটিকের কাজ রয়েছে সেখানে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে হবে এবং যেখানে স্টেরয়েডের কাজ রয়েছে সেখানে স্টেরয়েড ব্যবহার করতে হবে ।
একজিমার ফুসকুড়ি এবং অন্যান্য লক্ষণগুলো প্রশমিত করতে হলে স্টেরয়েড ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন অনেক বিশেষজ্ঞ ডাক্তার। তবে তারপরেও ঠিক কী মাত্রায় স্টেরয়েড ব্যবহার করতে হবে সেটি ডাক্তারের কাছ থেকেই জেনে নেওয়া উত্তম ।সুতরাং বাচ্চার যদি অ্যাকজিমা দেখা দেয় তাহলে কোন ভালো শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
অ্যাকজিমা কি সংক্রামক রোগ?
যদি একজিমার জীবাণু অন্য কারো ক্ষতিগ্রস্ত ত্বকে প্রবেশ করে তবে সেই ক্ষেত্রে সেই ব্যক্তিও একজিমা রোগে আক্রান্ত হবে।
একজিমা ফেটে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে। অনেকেই বলে থাকেন ,এটি বংশানুক্রমিক । আবার অনেকেই বলেন এটি এলার্জি এবং পরিবেশগত কারণে হয় ।
মনে রাখবেন একজিমা রোগের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন না হলে পরবর্তীতে এটি ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করলে তা শিশুর জন্য খুবই কষ্টদায়ক হয় ।