ইমেইল লেখার নিয়ম

একটা সময় ছিল যখন চিঠির মাধ্যমে আমরা একে অপরের সাথে যোগাযোগ করতাম সেটা ব্যক্তিগত কিংবা অফিসিয়াল কাজে। কিন্তু এখন যুগ অনেক পাল্টে গেছে, এখন ডিজিটাল যুগ। চিঠি পাঠানোর সময় আর নেই আর চিঠি পাঠানোর কথা এখন আর কেও ভাবতেই পারেনা। একে তো চিঠি পৌছাতে সময় লাগে আবার সেই চিঠি পথে মিসিং হবারও সুযোগ থেকে যায়। পক্ষান্তরে, ইমেইল বা ইলেক্ট্রনিক মেইল হচ্ছে যোগাযোগের এক আধুনিক ব্যবস্থা যা সাথে সাথে প্রাপকের কাছে চলে যায় এবং মিসিং হবার কোন সম্ভাবনাই নেই। আধুনিক এই যুগে তাই ইমেইল লেখার নিয়ম জানাটা প্রতিটি মানুষের জন্যই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সে হোক ব্যক্তিগত কাজে কিংবা অফিসিয়াল কাজের জন্য।

উপরের কথাগুলো থেকে একটা বিষয় পরিস্কার। ইমেইল দুই ধরনের হতে পারে।

  • ব্যক্তিগত ইমেইল বা ইনফরমাল ইমেইল
  • বিজনেস ইমেইল বা ফরমাল ইমেইল

আজকের লেখাটি আমি এমনভাবে সাজিয়েছি যাতে যারা ইমেইল নিয়ে তেমন কিছুই জানেন না তাদের থেকে শুরু করে এডভান্স লেভেলের সবার কাজে আসবে। যারা বিগিনার লেভেলের তারা অবশ্যই পুরা কনটেন্ট পড়ে দেখবেন আর যারা এডভান্স লেভেলের তারা সূচিপত্র দেখে এগিয়ে যাবেন। তাদের জন্য ইমেইল লেখার নিয়ম লেখাটি পুরোটা না পড়লেও চলবে।

শুরুতেই একদম বিগিনার যারা, যারা জানেন না ইমেইল কি? ইমেইল একাউন্ট কিভাবে খুলে? ইমেইল কিভাবে কাজ করে? কেন ইমেইল গুরুত্বপূর্ণ? তারা নিচের ব্লগটি পড়ে আসুন। তারপর সামনে এগিয়ে যান।

ইমেইল একাউন্ট কিভাবে তৈরি করে? ইমেইলের কাজ কি?

আশা করি ইমেইল নিয়ে আপনার যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর উপরের লিংক থেকে জেনে গেছেন। এবার আসুন সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া যাক আজকের টপিক ইমেইল লেখার নিয়ম নিয়ে।

সাধারণত ইমেইল ব্যবহার করার জন্য বা ইমেইল পাঠানোর জন্য আপনাকে একটি ইমেইল সার্ভিস প্রোভাইডার ব্যবহার করতে হবে, এই যেমন আমরা সাধারণত জিমেইল, ইয়াহু, হটমেইল ইত্যাদি ব্যবহার করে থাকি। সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত এরা আমাদের ফ্রি সার্ভিস দিয়ে থাকে। এখান থেকে আমরা চাইলে ফ্রি ইমেইল এড্রেস খুলে ইমেইল পাঠাতে পারি।

আবার বিজনেসের প্রয়োজনে আমরা নিজস্ব ডোমেইন থেকেও ইমেইল এড্রেস খুলে নিয়ে ইমেইল পাঠাতে পারি। এক্ষেত্রে ইমেইল পাঠানোর জন্য আউটলুকের মত ইমেইল ক্লায়েন্ট ব্যবহার করতে পারি।

আপনি আউটলুক থেকেই ইমেইল পাঠান আর জিমেইল থেকেই ইমেইল পাঠান মূল বিষয়গুলো কিন্তু একই হবে। তাই এটি আর বার বার উল্লেখ করলাম না।

ইমেইল এর বেসিক বিষয়গুলো জেনে নেই

আপনি যখন আপনার ইমেইলে ঢুকে যাবেন কিংবা সাইন ইন করবেন, আপনাকে নিচের বিষয়গুলো জেনে নিতে হবে। আমি সবগুলো টপিকেরই সামান্য বর্ণনা দিয়ে দিচ্ছি আপনার বুঝার সুবিধার জন্য।

ইনবক্স (Inbox) –ইনবক্স হল সেই ফোল্ডার যেখানে আপনার সকল ইমেইল এসে জমা হয়। আপনি নিজে ডিলিট না করে দিলে আপনার সকল ইমেইল এই ইনবক্সে এসে জমা হতে থাকবে। আপনি যদি ইমেইলটি পড়ে ফেলেন তাহলে এটি রিড করা হয়েছে দেখাবে আর না পড়ে থাকলে আনরিড অবস্থায় থাকবে।

আউটবক্স (Outbox) – আপনি কোন ইমেইল লিখে সেন্ড করে ফেললে যতক্ষন না ইমেইলটি তার প্রাপকের উদ্দেশ্যে যাত্রা করছে ততক্ষন সে আউটবক্সে থাকবে। এসময় সে যদি কোন এটাচমেন্ট থাকে তা ইমেইলের সাথে সংযুক্ত করে নিবে, প্রাপকের ঠিকানার সিনটেক্সট ঠিক আছে কিনা   ইত্যাদি চেক করবে, নেট কানেকশন আছে কিনা দেখবে। সব ঠিক থাকলে ইমেইল দৌড় দিবে।

সেন্ট আইটেম (Sent Item) – এটা সেই ফোল্ডার যেখানে আপনার পাঠানো ইমেইলের কপি জমা থাকে এবং পরবর্তীতে ডকুমেন্ট হিসেবে সংরক্ষণ করে থাকে। সেন্ট আইটেমের ইমেইল ডিলিট করে দিবেন না, কাওকে আপনি যে ইমেইল পাঠাইয়েছেন তার এভিডেন্স হিসেবে আবার দেখাতে কাজে লাগবে।

ড্রাফট (Draft) –আপনি একটি ইমেইল লিখা শুরু করে যদি কোন কারনে ভুলে যান তাহলে তা এই ড্রাফট ফোল্ডারে জমা থাকে। এটা অটো সেভ হয়ে থাকে। আপনি মুছে ফেললে তা আর থাকবেনা। ট্রাসে চলে যাবে।

স্প্যাম বা জাংক (spam/Junk) – এটা সেই ফোল্ডার যেখানে জাংক ইমেইল গুলো জমা থাকে। জাংক ইমেইল সেই সব অপ্রয়োজনীয় ইমেইল যেগুলো স্প্যামিং করার জন্য পাঠান হয়ে থাকে। ইমেইল সার্ভিস প্রোভাইডার নির্দিষ্ট কিছু এলগরিদমের মাধ্যমে বুঝে নেয় কোনগুলো স্প্যাম ইমেইল বা জাংক ইমেইল। এধরনের ইমেইলগুলো অটোমেটিক জাংক ফোল্ডারে চলে যায়।

কম্পোজ (Compose) – এখানে ক্লিক করে আপনি নতুন ইমেইল লিখা শুরু করতে পারবেন। অনেক সময় রাইট নিউ (Write New) অথবা শুধু নিউ (New) লেখা থাকে। সে যাই হোক কাওকে ইমেইল লিখতে হলে আপনাকে এখানেই আসতে হবে। এখানে এলে যে ৫টি বিষয় আপনার নিজরে আসবে সেগুলোর পরিচয় দিয়ে নিচ্ছি।

To –যাকে উদ্দেশ্য করে ইমেইল পাঠাবেন এই ঘরে তার ইমেইল এড্রেস লিখতে হয়।

CC –এটার মানে হল কার্বন কপি। এখানে তাদের ইমেইল এড্রেস লিখবেন যাদের উদ্দেশ্য করে ইমেইলটি লিখছেন না কিন্তু তাদের এই ইমেইলটি পড়া দরকার আছে। অর্থাৎ যারা সংশ্লিষ্ট ইমেইলের ঘটনার সাথে সংযুক্ত। এখানে যাদের ইমেইল এড্রেস দিবেন সবাই জানবে কে কে এই ইমেইলটি পাচ্ছেন। cc একই সাথে অনেককেই দেয়া যায়।

BCC – এটার মানে হল ব্লাইন্ড কার্বন কপি। এই ঘরে যাদের ইমেইল এড্রেস দিবেন তাদের কেও কারও ইমেইল এড্রেস জানবেনা এবং কাকে কাকে পাঠানো হচ্ছে তাও জানতে পারবেনা। ধরেন আপনি আপনার কোন সুখবর সবাইকে জানাতে চান তাহলে bcc ব্যবহার করতে পারেন। এতে সবার ইমেইল এড্রেসের গোপনীয়তাও রক্ষা করা হল।

Subject – এখানে আপনার ইমেইলের সাব্জেক্ট লাইন লিখবেন। মনে রাখবেন, ইমেইলের সাব্জেক্ট লাইন অবশ্যই আকর্ষণীয় হতে হবে। মেইল খোলার আগে যেহেতু সাব্জেক্ট লাইন পড়া যায়। তাই শুধুমাত্র সাব্জেক্ট পড়েই পাঠক সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন তিনি ইমেইল টি পড়বেন কি পড়বেন না। আপনার ইমেইলের সাব্জেক্ট যদি আকর্ষণীয় না হয় প্রায় ৯০ ভাগ অম্ভাবনা আছে মেইলটি না পড়েই ডিলিট করে ফেলার।

Email Body/ Composer – এখানে আপনি আপনার ইমেইলের মেইন বডি লিখবেন। এবং লেখা শেষে সেন্ড বাটনে ক্লিক করে প্রাপকের কাছে পাঠিয়ে দিবেন। আমাদের আজকের ব্লগ লেখার একটা বড় উদ্দেশ্য এই বডি নিয়ে। ধীরে ধীরে সামনে এগিয়ে গেলেই বুঝে যাবেন।

এই কম্পোজার অনেকটাই মাইক্রোসফট ওয়ার্ডের মতই। লেখা এডিটিং বা অন্যান্য ব্যাপার স্যাপার একই ধাচের এটি নিয়ে আর আলোচনা না করলেই হচ্ছে।

Attachment – অনেক সময় ইমেইলের সাথে কোন ডকুমেন্ট বা ফাইল পাঠানোর প্রয়োজন হতে পারে। হতে পারে কোন ছবি, পিডিএফ ফাইল, স্ক্যান কপি ইত্যাদি। একটি নির্দিষ্ট সাইজ পর্যন্ত ফাইল আপনি এটাচমেন্ট অপশনের সাহায্যে পাঠিয়ে দিতে পারবেন। ২০এমবি বার তার বেশি সাইজ হলে অনেক সময় এটাচমেন্ট হিসেবে পাঠানো যায় না। সেক্ষেত্রে অন্য ব্যবস্থা নিতে হবে।

Reply/ Reply to all – Reply বাটনে ক্লিক করলে  যিনি আপনাকে ইমেইলটি পাঠিয়েছেন তার কাছে উত্তর দেয়ার অপশনে চলে যাবেন। সেখানে গিয়ে ইমেইল লিখে সেন্ড বাটনে ক্লিক করলেই ইমেইল চলে যাবে। cc তে যারা আছেন তারা এই রিপ্লাই ইমেইলটি পাবেন না।

আর Reply to all বাটনে ক্লিক করলে ইনি আপনাকে ইমেইলটি পাঠিয়েছেন তিনি এবং যারা যারা cc তে আছেন সবাই একইসাথে রিপ্লাই পেয়ে যাবেন।

ফরোয়ার্ড –কারও ইমেইল অন্য কাওকে সরাসরি পাঠিয়ে দেবার জন্য ফরোয়ার্ড অপশন ব্যবহার করা হয়।

এছাড়াও আরও কিছু কিছু অপশন থাকে ইমেইলে যা আমরা সেটিংস এ গেলে পেতে পারি। এগুলো জেনে রাখুন সেটিংস এ গিয়ে চালু করে নিতে পারবেন।

  • সিগনেচার অপশন (Signature)
  • ভ্যাকেশন রেসপন্স (Vacation Response)
  • মিটিং রিকুয়েষ্ট (Meeting Request)
  • ইমেইল এড্রেস বুক (Email Address Book)
  • ক্যালেন্ডার ইত্যাদি

আসলে এতক্ষন যা যা লিখেছি অনেকেরই তার কোন কিছুই জানার প্রয়োজন নেই। তারপরেও লিখেছিই কারণ অনেকেরই আবার এই জিনিষগুলো জানা নেই। একারনেই লেখা। আশা করি যারা জানেন তারা বিরক্ত হননি। ইমেইল লেখার নিয়ম নিয়ে লিখতে গেলে আসলে এসবকে এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয় একদমই।

ইমেইল লেখার নিয়ম

ইমেইল লেখার সাধারণ কিছু নিয়ম আছে, প্রথমে আমি সেই অংশটুকু আগে শেয়ার করছি। পয়েন্ট আকারে দিয়ে দিচ্ছি এতে আপনার বুঝতে এবং মনে রাখতে সুবিধা হবে। তাহলে আসুন শুরু করি ইমেইল লেখার নিয়ম। এডভান্স লেভেলের পাঠকেরা এখান থেকে পড়া শুরু করতে পারেন ইমেইল লেখার নিয়ম জানতে।

Salutation বা Addressing বা সম্বোধন

ইমেইল লেখার ক্ষেত্রে শুরুতেই আপনাকে যাকে ইমেইল লিখছেন তাকে সম্বোধন করতে হবে। বিষয়টি নির্ভর করছে আপনি কি টাইপের ইমেইল লিখছেন তার উপর। যদি আপনি ব্যক্তিগত ইমেইল লিখতে শুরু করে থাকেন তাহলে আপনি নিচের মত যেকোন সম্বোধন করতে পারেন।

Hello Zaman, Hi Zaman, Hey Zaman bhai, Hello Zaman bhai, Hi Zaman Bhai ইত্যাদি।

আবার যদি আপনি বিজনেস ইমেইল লেখা শুরু করে থাকেন তাহলে আপনাকে একটু সতর্ক হতে হবে আবশ্যই। যাকে লিখছেন তার সাথে আপনার সম্পর্ক যাই হোক না কেন অফিসিয়ালি আপনাকে একটু ফরমাল হতেই হবে। বিজনেস ইমেইল লেখার ক্ষেত্রে আপনি সম্বোধন নিচের মত করে লিখতে পারেন।

Dear Mr. Zaman, Dear Zaman Sir, Dear Sir, Dear Zaman Bhai ইত্যাদি।

Salutation বা Addressing বা সম্বোধন একটি ইমেইলের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। এখানে ভুল করে ফেললে যাকে ইমেইল লিখছেন তিনি ব্যপারটি ভাল ভাবে নাও নিতে পারেন। তাই সতর্ক হন।

Email Subject

মনে রাখবেন ইমেইলের সাব্জেক্ট লাইন হতে হবে আকর্ষণীয়। কারণ প্রতিদিন যত ইমেইল পাঠানো হয় তার ৮০% ইমেইল প্রাপক শুধুমাত্র সাবজেক্ট পড়েই ডিলিট করে ফেলন। ভেতরে খুলে দেখার প্রয়োজন মনেই করেন না।

একবার ভেবে দেখুন আপনার ইমেইল যদি কেও খুকেই না দেখেন তাহলে আপনার এত কষ্ট করে ইমেইল লিখার উদ্দেশ্যই মাটি। বুঝেন ইমেইল লেখার নিয়ম জানা কতটা ইম্পরট্যান্ট।

আর আপনার ইমেইল যদি হয় প্রোডাক্টের মার্কেটিং তাহলে ত কথাই নাই। আই আপনার ইমেইল সাবজেক্ট এমনভাবে লিখুন যাতে সাবজেক্ট পড়ে মেইল ওপেন করতে আগ্রহি হয়ে ওঠেন প্রাপক।

ইমেইল সংক্ষিপ্ত করুন

কয়েক লাইনের মধ্যে আপনার ইমেইল এর সব কথা সেরে ফেলুন। লম্বা ইমেইল পড়ে দেখার মত সময় কারও নেই। তাই অল্প কথায় গুছিয়ে মূল সারমর্ম লিখে দিন। প্রয়োজনের বাইরে একটি কথাও লিখবেন না। সে হোক অফিসিয়াল বা পার্সোনাল ইমেইল।

মনে রাখবেন, বড় ইমেইল লিখলে সবাই লাইন স্কিপ করে চলে যায়। আর লম্বা ইমেইল তার গুরুত্ব হারিয়ে ফেলে পাঠকের কাছে।

পাঠককে গুরুত্ব দিন

আপনি যাকে ইমেইল লিখছেন তাকে গুরুত্ব দিন। মেইলের প্রথমে এবং শেষে এতা উল্লেখ করতে ভুলবেন না।

শেষে লিখুন আপনি তার ফিরতি ইমেইলের জন্য অপেক্ষা করছেন এবং যেকোন প্রয়োজনে আপনার সাথে যোগাযোগ করতে যেন তিনি কুন্ঠাবোধ না করেন।

Signature দিন শেষে

ইমেইলের শেষে আপনি সিগনেচার দিন। ইমেইল এর সিগনেচার মানে স্বাক্ষর নয়। ইমেইলের শেষে আপনার নাম, পরিচয় এবং ফোন নাম্বার দিন। এক্ষেত্রে আপনার নামের নিচে আপনার অফিসিয়াল পদ, মোবাইল নম্বর এবং কম্পানির নাম উল্লেখ করতে পারেন।

এতে পাঠক চাইলে ফোনের মাধ্যমে আপনার সাথে দ্রুত যোগাযোগ করতে পারে।  Whatsapp, Viber, Wechat নম্বর থাকলে তাও উল্লেখ করে দিতে পারেন। পরবর্তী যোগাযোগের জন্য এসব মেসেঞ্জার খুব দ্রুততার সাথে কাজে দিতে পারে।

সিগনেচারের আগে বিদায় নিয়ে নিন। ইমেইলের ক্ষেত্রে Thanks, Thank You, Best Regards, Regards ইত্যাদি লিখে শেষ করবেন।

অপ্রয়োজনীয় ইমেইল লিখা থেকে বিরত থাকুন

যে কাজটি ওভার ফোনে কিংবা সামনা সামনি হয়ে যাচ্ছে তার জন্য ইমেইল লিখে সময় নষ্ট করবেন না। ইমেইল শুধুমাত্র গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্যই প্রেরন করুন।

সামান্য কাজে ইমেইল পাঠিয়ে পাঠকের কাছে নিজেকে গুরুত্বহীন করে তুলবেন না।

বারবার পড়ে দেখুন

ইমেইল পাঠানোর আগে আপনি আপনার লেখা ইমেইলটি বার বার করে পড়ে দেখুন। কোন প্রকার বানান ভুল কিংবা ব্যকরনগত ভুল আছে কিনা?

ভুল বানান কিংবা ভাষাগত ভুল আপনার ইমেইলকে মূল্যহীন করে তুলতে পারে। তাই বার বার প্রুফ রিডিং করে দেখুন।

To, CC, BCC চেক করে দেখুন

ইমেইলটি কাকে পাঠাতে চাইছেন, কাকে কাকে cc দিতে চাচ্ছেন, সব ঠিক আছে কিনা। যাদেরকে cc  তে রাখছেন তারা সবাই এই ইমেইল এর সাথে সংশ্লিষ্ট কিনা তা বুঝে cc তে তাদের রাখুন।

অফিসের সব ইমেইলের cc তে আপনার হায়ার অথরিটিকে রাখার আসলে কোন প্রয়োজন থাকেনা। কারণ তারা এইসব ইমেইল পড়েও দেখেন না। শুধু শুধু তাদের মেইল বক্স ভরে ফেলা হয়।

ধরেন আপনি আপনার সাবকনট্রাক্টরকে একটি ড্রয়িং পাঠাবেন, এখানে আপনার বস্কে cc দেবার কোন যুক্তিকতাই নাই।

Reply/ Reply to all

কোন ইমেইলে Reply আর কোন ইমেইলে Reply to all দিতে হয় সেটা বোঝার চেষ্টা করুন। ধরুন  অফিসের সবাইকে cc তে রেখে একজন ইমেইল দিল কারও জন্মদিনে তাকে উইস করে। আপনি বোকার মত Reply to all দিয়ে তাকে আবার উইস করে বসেন, সেই মেইল সবার কাছে চলে যাবে। এখানে আপনার উচিত – যদি আপনি উইস করতে চান তাকে তাহলে শুধু Reply দিয়ে উইস করা।

CC, BCC এর যথাযথ ব্যবহার করুন

আপনি যদি কাওকে দাওয়াত দিতে চান কিন্তু জানাতে চাননা কাকে কাকে দাওয়াত দিচ্ছেন তাহলে অবশ্যই bcc ব্যবহার করবেন। এতে সবার যার যার ইমেইল এড্রেসও সুরক্ষিত থাকল।

Attachment চেক অরে দেখবেন

Attachment এর ক্ষেত্রে আমরা বেশ কয়েকটি ভুল প্রায়ই করে থাকি। এগুলো হলঃ

  • Attachment না Attach করেই ইমেইল সেন্ড করে দেই।
  • Attach ফাইলটির নাম রিনেম না করেই Attach করে ফেলি।
  • ইমেইল এর বডিতে স্মরন করিয়ে দেইনা যে ইমেইলের সাথে Attachment রয়েছে।
  • একাধিক Attachment থাকলে নাম্বারিং করে দেইনা।
  • অনেক সময় ভুল ফাইল Attach করে দেই ভুল করে।

গুরুত্ব বোঝাতে বিভিন্ন ফন্ট ও কালারের ব্যবহার

অনেক সময় কথার গুরুত্ব বুঝাতে লাইন বোল্ড করি, বিভিন্ন কালার ব্যবহার করি, বড় ফন্ট দেই, আন্ডার লাইন করি ইত্যাদি। কিন্তু এসব করে আসলে আপনার ইমেইলের সৌন্দর্য হারায় ছাড়া বাড়ে না।

এসবের অতিরিক্ত বুবহার আপনার ইমেইলকে আসলে ক্লাউনের মত করে তোলে। দেখতেও লাগে বিশ্রি। সিম্পল ভাবে লেখুন, বাই ডিফল্ট যে ফন্ট থাকে, যে সাইজ থেক তাই ব্যবহার করুন। গুরুত্ব বোঝাতে বোল্ড, ইটালিক, আন্ডারলাইন ইত্যাদির মাঝে যেকোন একটি করুন। তার বেশি নয়।

বডিতে ছবি বা মাল্টিমিডিয়ার ব্যবহার

একটি ছবি একসাথে অনেক কথা বলে ফেলে। আপনি চাইলে মেইলের বডিতে ছবি ব্যবহার করতে পারেন। এতে পাঠক আপনার ইমেইলের প্রতি আগ্রহি হয়ে উঠতে পারেন।

ছবিটি এমন ভাবে সংযুক্ত করুন যাতে তা মেইলের বডিতে থাকে, এটাচমেন্ট হিসেবে না থাকে। অনেকেই এটাচমেন্ট খুলে ছবি দেখতে চাইবেন না। ছবিটি যেন কালারফুল হয় সেদিকে নজর দিবেন।

বড় লিংক থাকলে তা এভয়েড করুন

অনেক সময় আমাদের কোন লিংক শেয়ার করতে হতে পারে। এতে আসলে দুইটি সমস্যা। ইমেইলের বডিতে লিংক থাকলে সেই ইমেইলটি স্প্যামে চলে যেতে পারে, আর বড় কোন লিংক হলে সেটি মেইলের সৌন্দর্য নষ্ট করে ফেলে। তাহলে উপায় কি।

এর সম্ভাব্য সলিউশন হল- লিংক সর্টেনার ব্যবহার করা। লিংক সর্টেনার ব্যবহার করলে বড় লিংক ছোট করে নিয়ে আসা যায়।

বড় Attachment না পাঠানোই উত্তম

কোন কারনে বড় Attachment পাঠাতে হতে পারে। কিন্তু ইমেইলে বেশি বড় Attachment পাঠানো যায় না, তাহলে উপায় কি?

উপায় খুবই সহজ। ড্রপবক্স কিংবা গুগল ড্রাইভের মত ক্লাউডে ফাইলটি আপলোড করে সেই লিংক টি মেইলের বডিতে শেয়ার করলেই হল।

লিংটি লিংক সর্টেনার ব্যবহার করে ছোট করে দিলে আরও উত্তম। যাকে পাঠাচ্ছেন তাকে এক্সেস দিয়ে পাঠাবেন। চাইলে রিড অনলি করেও দিতে পারবেন। মেইলের বডিতে বিষয়টি উল্লেখ করে দিন। ইমেইল লেখার নিয়ম পড়তে এসে আসলেই অনেক কিছু শিখে যাচ্ছেন।

প্রয়োজনীয় ছক বা টেবিল যুক্ত করুন

আপিনি চাইলে আপনার মেইলের বডিতে Table বা ছক যুক্ত করে আপনার মেইলকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে পারেন। ভাবছেন কিভাবে মেইলের বডিতে Table বা ছক যুক্ত করবেন।

এই ইংরেজি ব্লগ পড়ে দেখুন এখানে চমৎকার কায়দায় বুঝিয়ে দেয়া আছে কিভাবে আউটলুক মেইলে Table যুক্ত করতে পারবেন

Vacation Auto  Response

আপনি যদি অফিসের বাইরে ছুটিতে থাকেন এবং ইমেইলের রেসপন্স করতে ব্যর্থ হন তাহলে অবশ্যই ভ্যাকেশন অটো রেসপন্স সেট করে রাখুন। অটো রেসপন্ডার যেকোন ইমেইল আসার সাথে সাথে অটোমেটিক রেসপন্স সেন্ডারের কাছে পাঠিয়ে দেবে যার মাধ্যমে প্রাপক জানতে পারবে যে আওনি ছুটিতে আছেন। ইমেইল লেখার নিয়ম এর মধ্যে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ইমেইল লিখতে ৫ ভুল

আশা করি উপরের লেখা থেকে আপনি ইমেইল লেখার নিয়ম জেনে গেছেন। এখন আমরা আলাপ করব ইমেইল করতে গিয়ে যে পাঁচটি ভুল আমরা প্রায়ই করে থাকি।

  • সাবজেক্ট না লিখেই মেইল সেন্ড করে দেই ভুল বশতঃ।
  • মেইলের শেষে সিগনেচার দেই না।
  • প্রচুর বানান ভুল এবং ভাষাগত ভুল করে থাকি।
  • এটাচমেন্ট ছাড়াই মেইল সেন্ড করে ফেলি।
  • ইমেইল এড্রেস ভুল বানানে লেখি তাই ইমেইল বাউন্স করে ফিরে আসে।

 

Previous articleমাসে লাখ টাকা আয় করতে চান কিন্তু কিভাবে করবেন?
Next articleটাকা ইনকাম করার সহজ উপায় বাংলাদেশে
যে ব্যর্থ সে অজুহাত দেখায়, যে সফল সে গল্প শোনায়। আমি অজুহাত নয় গল্প শোনাতে ভালবাসি। আসুন কিছু গল্প শুনি, নিজের গল্প অন্যকে শুনাই।