ইউটিউব ভিডিও বানাতে কি কি লাগে

আজকাল অনেকেই ইউটিউবে ভিডিও আপলোড করে মাসে হাজার হাজার টাকা ইনকাম করে নিচ্ছেন খুব সহজে। হয়ত আপনার পাশের কলিগ কিংবা বন্ধু। তার চেয়ে আপনার যোগ্যতা কোন অংশেই কম নয়। কিন্তু আপনি পারছেন না। হয়ত সামান্য গাইডলাইন দিয়ে দিলে আপনি তার চেয়ে আরও বেশি সফল হতে পারতেন। আপনি জানেন না ইউটিউব ভিডিও বানাতে কি কি লাগে তাই হয়ত পারছেন না। ২০২২ সালে এই জ্ঞান থাকাটা আপনার জন্য অতীব জরুরী।

আমার আজকের এই ব্লগে আমি আপনাদের জানাব ইউটিউব ভিডিও বানাতে কি কি লাগে। আর তাহলেই আপনিও আপনার বন্ধুর মত ইউটিউব ভিডিও বানাতে পারবেন আর আয় করতে পারবেন মাসে লাখ লাখ টাকা। ধরে নিচ্ছি আপনি কিছুই জানেন না, তাই শুরু করছি একদম গোড়ার দিক থেকেই।

ইউটিউব কি

ইউটিউব একটি ভিডিও স্ট্রিমিং ওয়েব সাইট। এখানে যেকেও ভিডিও আপলোড করে তা শেয়ার করে দিতে পারে এবং সারা পৃথিবীর যেকোন প্রান্ত থেকে যেকেও চাইলে সেই ভিডিও উপভোগ করতে পারেন। তাই ইউটিউবকে বলা যায় ভিডিও স্ট্রিমিং এবং একই সাথে ভিডিও শেয়ারিং ওয়েব সাইট।

ইউটিউব এর বর্তমান মালিক গুগল। ২০০৬ সালে গুগল ১.৬ বিলিয়ন ডলার দিয়ে ইউটিউবকে কিনে নেয়।

ইউটিউবে চ্যানেল তৈরি করে আপনিও আপনার ভিডিও আপলোড করে দিতে পারেন। আপনার চ্যানেল মনিটাইজেশন পাওয়ার পর আপনিও ইউটিউব থেকে প্রতি মাসে টাকা আয় করতে পারেন।

ইউটিউব ভিডিও বানাতে কি কি লাগে

ইউটিউব ভিডিও বানাতে আসলে কি কি লাগে। এটা নির্ভর করছে আসলে আপনি কি ধরনের ভিডিও বানাবেন তার উপর। একেকজন মানুষ তাদের পছন্দ অনুযায়ী ভিডিও বানিয়ে থাকে। কেও শুধু মোবাইল দিয়েই তার ভিডিও তৈরি করে থাকে আবার কেও বা হাই কনফিগারেশন ক্যামেরা এবং হাই কুয়ালিটি অডিও/ভিডিও টুলস ব্যবহার করে ভিডিও বানায়।

তবে, সে যাই হোক। ইউটিউব ভিডিও বানাতে হলে যা যা অবশ্যই লাগে তার একটি লিষ্ট আমি নিচে দিয়ে দিচ্ছি।

  • ক্যামেরা বা ভাল মানের মোবাইল ফোন
  • মাইক্রোফোন
  • লাইটিং সিস্টেম
  • ইন্টারনেট কানেকশন সহ একটি কম্পিউটার ( ভাল গ্রাফিক্স কার্ড সহ)
  • একটি ভাল মানের এডিটিং সফটওয়্যার

এছাড়াও আরও কয়েকটি জিনিষের দরকার। তা হলঃ ট্রাইপড স্ট্যান্ড, সাউন্ডপ্রুফ রুম, গ্রীন স্ক্রিনের পর্দা ইত্যাদি। তবে এসব ছাড়াও আপনি কাজ সারতে পারবেন। ধীরে ধীরে আলোচনায় আসছি।

ক্যামেরা বা মোবাইল ফোন

ভিডিও করার জন্য আপনার প্রথম যা লাগবে তা হল একটি ভাল মানের ক্যামেরা বা মোবাইল ফোন। মনে রাখবেন  ইউটিউব চায় তার দর্শককে কুয়ালিটি সম্পন্ন ভাল মানের ভিডিও উপহার দিতে। আপনি যদি ভাল মানের ভিডিও আপলোড না করেন তাহলে এটি সম্ভব না। যদি না আপনার একটি ভাল মানের প্রফেসনাল ক্যামেরা থাকে আপনি কিভাবে ভাল মানের ভিডিও তৈরি করবেন।

বাজারে ভাল মানের DSLR ক্যামেরা অনেক রয়েছে। আপনি আপনার বাজেট অনুযায়ি যেকোনটি কিনে নিতে পারেন। ক্যানন, নাইকন কিংবা ফুজি যেটিই কিনুন না কেন, ক্যামেরা কিভাবে ব্যবহার করতে হয় সেটি শিখে নিতে ভুলবেন না অবশ্যই।

এছাড়া আপনি চাইলে আপনার মোবাইল ফোন দিয়েও ভিডিও তৈরি করতে পারেন। এতেও কোন সমস্যা নেই। আবার আপনি যদি টিউটোরিয়াল টাইপের ভিডিও তৈরি করার পরিকল্পনা করে থাকেন সেক্ষেত্রে আপনার কোন ধরনের ক্যামেরারই প্রয়োজন নেই।

আপনার কম্পিউটার বা ল্যাপটপের স্ক্রীনের ভিডিও করে আপনি হয়ত কাজ চালিয়ে নিতে পারবেন। এজন্য সবচেয়ে ভাল সফটওয়্যার হল Camtasia।

কম্পিউটার বা ল্যাপটপ

র ভিডিও আপলোড করে খুব বেশি সুবিধা করতে পারবেন না। তাই আপনার প্রয়োজন একটি ভাল মানের কম্পিউটার বা ল্যাপটপ। ভাল মানের বলতে কি বুঝাচ্ছি? ভাল মানের কম্পিউটার বা ল্যাপটপ বলতে বুঝাচ্ছি সেই কম্পিউটারকে যার ভাল গ্রাফিক্স কার্ড রয়েছে, ভাল প্রসেসর রয়েছে এবং ভাল র‍্যাম আছে।

মিনিমাম ৪-৮ জিবি র‍্যাম, কোর আই ফাইভ প্রসেসর এবং ৪ জিবি গ্রাফিক্স কার্ড থাকলে আপনি স্বাচ্ছন্দের সাথে ভিডিও এডিটিং করতে পারবেন। এরচেয়ে কম মানের কম্পিউটারে ভিডিও রেন্ডারিং করতে আপনাকে অনেক সময় দিতে হবে।

একটি সাধারণ মানের কম্পিউটার যেই কাজ করতে দুই থেকে তিন ঘন্টা সময় নেবে সেই একই কাজ করতে  উপরে উল্লেখিত মানের কম্পিউটার সময় নেবে মাত্র ১৫ থেকে ২০ মিনিট। সুতরাং ভাল মানের কম্পিউটার কতটা গুরুত্বপূর্ণ আশা করি তা বুঝে গেছেন।

এরকম ভাল মানের একটি কম্পিউটার আপনি পেতে পারেন ৫০ থেকে ৬০ হাজারের মধ্যেই। আর যদি ল্যাপটপ কিনতে চান তাহলে ৮০০০০ টাকা লেগেই যাবে।

মাইক্রোফোন

ভিডিওতে আপনার ভয়েস যুক্ত করার জন্য আপনার লাগবে একটি ভাল মানের মাইক্রোফোন। বাজারে দুই নাম্বার চাইনিজ প্রোডাক্ট দিয়ে ভর্তি। কেনার সময় তাই খুব সাবধান, ডুপ্লিকেট মাইক্রোফোনের সাউন্ড রেকর্ডিং কুয়ালিটি খুব খারাপ। আপনার ভিডিও কুয়ালিটি ভাল করতে চাইলে তাই ভাল মানের অরিজিনাল মাইক্রোফোন কিনতে ভুলবেন না।

এক হাজার টাকা থেকে শুরু লাখ টাকার উপরে মাইক্রোফোন পাওয়া যায়। আপনার বাজেট অনুযায়ি কিনে নিন।

লাইটিং সিস্টেম

ভাল মানের ভিডিও করতে চাইলে আপনাকে ভাল লাইটিং সিস্টেম কিনতেই হবে। লাইট ব্যালেন্স ঠিক না থাকলে আপনাকে ভুগতে হবে। আর অবশ্যই লাইটিং নলেজ থাকা চাই। বাজারে অনেক ব্রান্ডের লাইটিং সিস্টেম আছে। আপনার পছন্দ মত কিনে নিন। হাজার পাঁচেক টাকার মধ্যে ভাল মানের লাইটিং সিস্টেম আপনি কিনে নিতে পারবেন।

ইন্টারনেট কানেকশন

ডিজিটাল যুগে আসলে ইন্টারনেট কানেকশন নিয়ে বলার কিছু নাই। তারপরেও ভাল মানের ব্রডব্যান্ড কানেকশন নিন যার ডাউনলোড এবং আপলোড স্পীড ভাল। মোবাইল ইন্টারনেটের উপর ভরসা না করাই বুদ্ধিমানের কাজ।

হয়ত, আপনার একটা ভিডিও ২ জিবি হয়ে যেতে পারে। এমন ইন্টারনেট কানেকশন নিবেন যেন ২ জিবি ডাটা খুব সহজে আপলোড করা যায়। আশা করি বুঝতে পেরেছেন।

মাসিক ৫০০-১০০০ টাকায় এমন স্পীডের ইন্টারনেট কানেকশন বাংলাদেশের সব জায়গায়ই পাওয়া যায়।

ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার

এটা আসলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আপনার র ভিডিওকে সামান্য এডিটিং করে আপনি খুবই আকর্ষণীয় করে তুলতে পারেন। সবাই তাই করে। ইউটিউবারেরা কোন ভিডিও সফটওয়্যার ব্যবহার করে সেটি নিয়ে আমাদের এই ব্লগটি পরে দেখুন।

আপনি, Filmora, Camtasia, adobe premier ইত্যাদি যেকোন ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার ব্যবহার করে দেখতে পারেন। এই তিনটি সবকটির ব্যবহার খুবই সহজ। ইউটিউবে সামান্য কিছু টিউটোরিয়াল দেখে নিলে আপনি নিজেই পারবেন। তেমন কোন কঠিন কাজ নয়।

গুগল থেকে এগুলোর ক্র্যাক ভার্সন খুঁজে নিন। ফ্রি ভার্সনে আপনার কাজ হবে না।

অনেকেই বলেন তাদের কাছে কম্পিউটার বা ল্যাপটপ নেই, তারা মোবাইল দিয়ে ভিডিও বানাতে পারবেন কিনা? অবশ্যই পারবেন। সবচেয়ে বেশি যে এপস প্রচলিত তা হল কাইনমাস্টার। এছাড়াও আরও অনেক এপ্স রয়েছে যেমন- Capcut, YouCut, Video Maker, Andro Vid ইত্যাদি।

তবে অডিও-ভিডিও এডিটিং করার জন্য যাই ব্যবহার করেন না কেন আপনাকে তার ব্যবহার করা শিখে নিতে হবে। এজন্য আপনাকে আবারও ইউটিউবের শরণাপন্ন হতে হবে।

ট্রাইপড স্ট্যান্ড

আপনি ক্যামেরা কেনার সময় ট্রাইপড স্ট্যান্ড কিনে নিতে পারেন, সেটি DSLR ক্যামেরার জন্য ব্যবহার করবেন। কিন্তু মোবাইল সেই ট্রাইপডে রাখতে পারবেন না। মোবাইলের জন্য আপনাকে আলাদা ট্রাইপড স্ট্যান্ড কিনে নিতে হবে।

ট্রাইপড স্ট্যান্ড ছাড়া মোবাইল বা ক্যামেরা যাই দিয়ে ভিডিও করেন না কেন, লেন্সের পজিশন নড়াচড়া করলে ভিডিও ফ্রেম নড়াচড়া করে যেতেই পারে। তাই আপনার উচিত একটি ট্রাইপড স্ট্যান্ড কিনে নেয়া। আর এর দামও খুব বেশি না। ক্যামেরাকে ফিক্সড পজিশনে ধরে রাখার জন্য এর কোন বিকল্প নেই।

ট্রাইপড স্ট্যান্ডের দামও খুব একটা বেশি না। ৩০০-৩০০০ টাকার মধ্যে আপনি ভাল মানের ট্রাইপড স্ট্যান্ড কিনে নিন বাজার থেকে।

কি ধরনের ভিডিও বানাবেন?

ইউটিউব ভিডিও বানাতে কি কি লাগে তা নিয়ে তো অনেক আলোচনা হল। এবার আসুন কি ধরনের ভিডিও বানাবেন তা নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক। যদিও এটা নির্ভর করে আপনার উপর। একটি বিষয় সব সময় মনে রাখবেন, যে বিষয়ের উপর আপনার ইন্টারেস্ট আছে এবং একই সাথে যে বিষয়ে আপনার জ্ঞান ভাল- ভিডিও বানানোর জন্য অবশ্যই সেই বিষয়কে বেছে নেবেন।

ইউটিউবে যারা ভিডিও বানিয়ে থাকেন তারা মূলত ভিডিও বানিয়ে থাকেন ট্রাভেলিং, কুকিং, এন্টারটেইনমেন্ট, এডুকেশন, হেলথ ইত্যাদি নানা বিষয়ের উপর। আপনি আপনার পছন্দমত বিষয় বেছে নিন।

কি ওয়ার্ড এনালাইসিস এবং এসইও শিখুন

ব্লগিং এর মত ইউটিউবও কি ওয়ার্ড এনালাইসিস এবং এসইও এর বাইরে নয়। তাই আপনার এব্যাপারেও কিছুটা নলেজ লাগবেই। একটি ভিডিও তৈরি করার আগেই আপনার কি ওয়ার্ড এনালাইসিস করে নিতে হবে। কি ওয়ার্ড নিয়ে জানতে চান? কি ওয়ার্ড এনালাইসিস এবং এসইও নিয়ে আমার লেখা ব্লগগুলো সময় নিয়ে পড়ে আসুন প্লিজ।

ইউটিউবের এসইও তেমন কঠিন কিছুই না। টিউব্বাডি টুলস আপনাকে শতভাগ সহযোগিতা করবে। এটা একটা ফ্রি টুলস। আপনি আপনার গুগল ক্রোমের এক্সটেনশনে এটি যুক্ত করে নিবেন অবশ্যই।

মনে রাখবেন কি ওয়ার্ড এনালাইসিস এবং এসইও আপনার ভিডিওকে সহজে দর্শকের কাছে পৌঁছে দিবে।

এর সাথে লাগে আরেকটি ইম্পরট্যান্ট জিনিষ

ভাই, উপরের সবই আছে কিন্তু যে জিনিষটি না থাকলে আপনি সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হবেন তা হল অসীম ধৈর্য। মোবাইল, কম্পিউটার, ক্যামেরা, ট্রাইপড সব কিনে নিয়ে এসে বাসায় রেখে দিলেন কিন্তু ভিডিও বানানোর ধৈর্য যদি আপনার না থেকে থাকে তাহলে আপনার আর হবেনা।

তাছাড়া মনিটাইজেশন পাওয়াও এখনকার সময়ে এত সহজ ব্যাপার না। কোন প্রকার ইনকাম ছাড়া টানা দুই বছর কাজ করার ধৈর্য যদি আপনার না থাকে তাহলে আপনি ইউটিউব ভিডিও বানানোর কাজ শুরু না করলেই ভাল করবেন। কারণ মনিতাইজেশন পেতে আপনার দুই বছর লেগে যেতেই পারে।

১০০০ সাবস্ক্রাইবার এবং ৪০০০ ঘন্টা ওয়াচ আওয়ার করে নেয়াটাও এত সহজ ব্যাপার নয়। অনেক ইউটিউবার দেখেছি যারা ২/৪/৫ মাস কাজ করে ইউটিউব ছেড়ে চলে গেছে। এমন হলে শুরু না করাই বরং ভাল।

Previous articleবিট কয়েন একাউন্ট খুলুন এবং বিট কয়েন নিরাপদে রাখুন।
Next articleচাকরির জন্য সিভি লেখার নিয়ম – সঠিকভাবে সিভি লিখে এক ধাপ এগিয়ে থাকুন।
যে ব্যর্থ সে অজুহাত দেখায়, যে সফল সে গল্প শোনায়। আমি অজুহাত নয় গল্প শোনাতে ভালবাসি। আসুন কিছু গল্প শুনি, নিজের গল্প অন্যকে শুনাই।