২০০০ সালের পর ইন্টারনেট জগতের সবচেয়ে বড় অলোড়ন সৃষ্টিকারী ঘটনা বোধ হয় ফেসবুক। শুধু ২০০০ সালের পরের ঘটনাই নয়, ২০০০ সালের আগের হিসাবও যদি করা যায় তাহলেও ফেসবুকের মত এত দ্রুত কোন ব্যবসাকে বিষবাষ্পের মত ছড়িয়ে যেতে দেখা যায়নি। হ্যা, আমি একে বিষবাস্পই বলব। বিষবাষ্পের মতই ফেসবুক আমাদের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে গেছে এবং যাচ্ছে যেখান থেকে আসলে আমাদের মুক্তি নেই।
এ ব্যাপারে আপনাদের কার কি অভিমত আমি জানিনা কিন্তু আজ হঠাৎ করেই আমার মনে হল আমি ফেসবুককে ঘৃণা করি। কেন? এর কারণগুলো নিয়ে অনুসন্ধান করার জন্যই আজ আমার এই লেখা। একটু খুঁজে দেখা যাক-
ফেসবুক নিয়ে নিচের ভিডিওটি দেখে নিতে পারেন।
সময় আপচয়ের এক চমৎকার মাধ্যম এই ফেসবুক
আসলে অধিকাংশ মানুষের মূল্যবান সময় অপচয়ের একটি মাধ্যম হচ্ছে এই ফেসবুক। বেশিরভাগ মানুষ তারা সারাদিনের একটা বড় অংশ ফেসবুকেই নষ্ট করে থাকে, যে সময়টুকু সে অন্য কোন প্রোডাক্টিভ কাজে ব্যয় করতে পারত।
আপনার হয়ত মনে হতে পারে, আরে ভাই আমি তো আমার ফ্রি টাইম ফেসবুকে ব্যয় করছি কিন্তু একটু ভেবে দেখুন তো আসলেই কি তাই। একটু খেয়াল করে দেখুন সারাদিনে আপনি কত সময় ফেসবুককে দিচ্ছেন?
ফেসবুকের কল্যাণে অযথাই আপনি এমন সব জিনিস দেখছেন যা আপনার ব্যক্তিগত জীবনে কোনই ভ্যালু এড করেনা। আসলে এর কোন লিস্ট তৈরি করে দেখান সম্ভব নয়। প্রতিদিনই এরকম হাজারো কনটেন্ট তৈরি হচ্ছে।
ফেসবুক আপনার মোটিভেশনকে নষ্ট করে
ফেসবুক অবশ্যই আপনার মোটিভেশনকে নষ্ট করে দেয়, এখানে প্রতিদিন মানুষজন তাদের পার্টি কিংবা শপিং এর ছবি আপলোড করে করে সবার সাথে শেয়ার করে।
আপনার যদি প্রায়ই রেষ্টুরেন্টে গিয়ে খাবার কিংবা শপিং করবার ক্ষমতা না থাকে এটা আপনাকে হীনমন্যতায় ফেলবে, সামাজিকভাবে নিজেকে ছোট মনে হবে। এতে স্বাভাবিকভাবেই আপনি আপনার জীবনের মোটিভেশন হারাবেন।
এটা যে একজন মানুষের জন্য কতটা ক্ষতিকর তা আসলেই বলে বুঝানো সম্ভন নয়।
ফেক নিউজে ভরা ফেসবুক
একটু খেয়াল করলেই দেখতে পাবেন, আপনার নিউজফিডের বেশিরভাগ নিউজই আসলে ফেক। আপনাকে তারা ভুল ইনফরমেশন দিচ্ছে। সস্তা জনপ্রিয়তার আশায় বেশিরভাগ ওয়েবসাইটই আকর্ষণীয় শিরোনাম ব্যবহার করে আপনাকে তাদের ওয়েবসাইটে ভিজিটর হিসেবে নিয়ে নিজেদের উদ্দেশ্য হাসিল করে নিচ্ছে।
অনেক ভাইরাল কন্টেন্টই আসলে মিথ্যা এবং আজগুবি কন্টেন্টে ভরপুর। এগুলো আসলে আমাদেরকে বিভ্রান্ত করে তোলে।
সস্তা এবং নিম্নমানের সেলিব্রেটি তৈরি করে ফেসবুক
অনেক সস্তা এবং নিম্নমানের সেলিব্রেটি তৈরি করে এই ফেসবুক। একটু ভেবে দেখুন তো আজ যদি ফেসবুক না থাকত এই পৃথিবীর এমন অনেক সেলিব্রেটি আছে যাদের কথা আপনি মোটেই জানতে বা চিনতে পারতেন না। অথচ আজ তারা নেটদুনিয়ায় ভাইরাল হয়ে আছে।
আপনার কি মনে হয়, তারা এতটা ফেমাস হবার যোগ্যতা রাখে? মোটেই না।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নামে আমাদের অসামাজিক করে তোলে ফেসবুক
ফেসবুককে বলা হয় এখনকার সময়ের সবচেয়ে শক্তিশালী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কিন্তু এই ফেসবুকের কল্যানেই আজ আমরা অনেকটাই অসামাজিক।
আপনার জীবনের অনেক গুরুতকপূর্ন ঘটনাই আপনি শুধুমাত্র ফেসবুকে শেয়ার করে দিয়েই খালাস। আর যারা দেখছে তারাও সেই ছবিতে লাইক কমেন্ট করেই দায়িত্ব সেরে নিচ্ছে।
এতে আমাদের মাঝে সামাজিকতা নষ্ট হচ্ছে বলেই আমার ধারণা। বলতে পারেন, অনেক বেশি মানুষকে আপনি আপনার লাইফ ইভেন্ট শেয়ার করছেন। যা ফোন করে বা সরাসরি দেখা করে শেয়ার করা সম্ভব নয়। একবার বলুনতো এত বেশি মানুষ কি আসলেই আপনার লাইফ ইভেন্টকে কেয়ার করে। মোটেই না।
আপনার লাইফ ইভেন্টগুলো শুধুমাত্র আপনার কাছের মানুষেরাই কেয়ার করে।
ফেসবুক আপনার ব্যক্তিগত জীবনের জন্য অনিরাপদ
আপনার ব্যক্তিগত জীবনের প্রাইভেসি নষ্ট করে এই ফেসবুক। আমাদের অনেকেই আমাদের প্রিয়জনের সাথে কাটানো খুব একান্ত মুহূর্তগুলোকে শেয়ার করি যা আপনার আসলে আপনার প্রাইভেসিকে নষ্ট করে।
এছড়াও হরহামেশাই এমন দেখা যায় পাশাপাশি বসে থেকেও দীর্ঘক্ষণ আমরা কেও কারও সাথে কথা বলছি না যা আমাদের পারস্পরিক সম্পর্কের অবনতির কারণ হতে পারে।
আপনাকে বধির করে গড়ে তুলছে ফেসবুক
সবশেষে জেনে রাখুন আপনার পার্টি কিংবা শপিং অথবা রেষ্টুরেন্টের খাবারের ছবিতে কিংবা যেকোন লাইফ ইভেন্টে আসলেই কারও কোন কিছুই আসে যায় না, বরঞ্চ এগুলোর প্রচারনা আপনাকে সামাজিকভাবে বধির করে গড়ে তুলছে।
সবশেষে
আমাদের মাঝে দ্বৈত চরিত্রে উদ্ভাবক এই ইন্টারনেট। অনেক পাপের জনক সে। এ যেন সে ডক্টর জেকিল এন্ড মিস্টার হাইডের মত। বাস্তব জগতে আমরা ডক্টর জেকিল আর ফেসবুকের জগতে আমরা মিস্টার হাইড।
ফেসবুকের কি ভাল কিছুই নাই? হয়ত আছে, কিন্তু আমার কাছে তা সামান্যই মনে হয়েছে, যেটুকু না থাকলে আসলে পৃথিবীর তেমন কিছুই ক্ষতি হয়ে যেত না। তাই আমি ফেসবুককে ঘৃণাই করি- সবসময়।