একটা সময় আমাদের দেশের মানুষের একটা ধারনা ছিল- যে ছেলেটা পড়াশোনায় কাঁচা, ডিগ্রী অর্জনে ব্যর্থ তার জন্যই ব্যবসা, আর যে লেখাপড়ায় পটু সে পড়শোনা করে চাকুরি করবে। কিন্তু আজকাল এই ধারনা থেকে আমরা বের হয়ে আসতে সমর্থ হয়েছি। পড়াশোনা জানা শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়ার কারনেই এটা সম্ভব হয়েছে। আজকাল অনেকেই বলছে চাকরি নেব না, চাকরি দেব। আর বলতেই হয় এদের বেশিরভাগই সফল। আজ হঠাৎ করে আমার মাথায় চলে এল অল্প টাকায় ব্যবসা করতে চাইলে কি ব্যবসা করা যায়? এবং একটা আইডিয়াও চলে এল।

অল্প টাকায় ব্যবসা মানে কত টাকা?

আসলে এই অল্প টাকা মানে আসলে কত টাকা? এটা কিন্তু একটা আপেক্ষিক ব্যাপার। কারও জন্য অল্প টাকা মানে ১০ হাজার আবার কারও জন্য অল্প টাকা মানে ১০ লাখও হতে পারে।

ছোট বেলার একটা বিজ্ঞাপনের কথা মনে পরে গেল। প্ত্রিকায় মাঝে মাঝেই দেখা যেত মাত্র ২ হাজার টাকায় ব্যবসা করুন। মোম তৈরির একটা খাঁজ আর কিছু কাঁচামাল দিয়ে খুব সহজে মোমের কারখানা করার প্রক্রিয়া উল্লেখ করা থাকত।

তবে আজ আমি আপনাদের সাথে একটা আইডিয়া শেয়ার করব যার মাধ্যমে আপনি একজন সফল উদ্যোক্তা হয়ে উঠতে পারবেন।

কি সেই অল্প টাকায় ব্যবসা ?

আমার কাছে বুদ্ধিটা খুবই চমৎকার লেগেছে, এতে আপনার খরচ খুব বেশি হবার কথা নয়। ১০-১২ লাখ টাকার মাঝেই হয়ে যাবার কথা, যদিও আমি এখনও চেক করে দেখিনি। পরবর্তী ব্লগে আমি এর প্রসেস এন্ড প্রস্পেক্ট এনালাইসিস করে লিখব, ফিজিবিলিটি এনালাইসিস করব। মানে, আপনি কিভাবে কি করবেন এবং কিভাবে এই ব্যবসা শুরু করবেন।

ব্যবসাটি হল ডিস্পোজিবল গ্লাস, প্লেট, বাটি আর কাপ তৈরি।

আপাত দৃষ্টিতে এই ব্যবসার ফিজিবিলিটি কেমন হবে?

এই করোনাকালিন সময়ে করোনা ভাইরাস আমাদের অভ্যাসে বেশ কিছু পরিবর্তন করে দিয়েছে। যার ফলাফল হিসেবে বেশ কিছু জিনিষের ব্যবহার আমাদের নিত্য জীবনে যোগ হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হল স্যানিটাইজার, সাবান, ডেটল, স্যাভ্লন ইত্যাদি। পাশাপাশি দেখবেন আমরা এখন চায়ের দোকানে গেলেও ওয়ান টাইম কাপে চা খেতে স্বচ্ছন্দ বোধ করছি।

এছাড়া বিয়ে বাড়ি কিংবা খাবারের দোকানে ওয়ান টাইম প্লেট বাটির ব্যবহার বেড়ে গেছে। আমরা কেওই অন্য কারও ব্যবহার করা প্লেট বা বাটিতে খাবার খেতে চাইছি না।

তাই আমার মনে হয়েছে এখনই রাইট টাইম এই ব্যবসা লুফে নেবার। আপনার বাড়ি যদি ঢাকার বাইরে হয় তাহলে হয়ত আরও বেশি ভাল হবে এই ব্যবসার জন্য। নিজের বাড়িতেই আপনি একটি অতরিক্ত রুমে শুরু করে দিতে পারবেন এর প্রোডাকশন।

ব্যবসায় সফল হবার কিছু শর্ত আছে, এগুলো মেনে না চললে আপনার জন্য সফল হওয়াটা বেশ কঠিনই হবে। ব্যবসায় সফল হবার উপায় জানতে এইখানে পড়ুন

এছাড়াও পড়ে দেখতে পারেন আমার এই ব্লগঃ সফল যারা কেমন তারা

কারা হবে আপনার কাস্টমার?

প্রথমে আপনি আপনার নিজের এলাকাকেই বেছে নিন না কেন? আপনার এলাকার দোকানে দোকানে দিয়ে দিন। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে আপনার এলাকার কমিউনিটি সেন্টার কিংবা ডেকোরেশনের দোকান সবাই আপনার কাস্টমার। ধীরে ধীরে আপনার মার্কেটিং বাড়ান, নিজ এলাকা ছেড়ে পাশের এলাকায় চলে যান।

আশা করি এভাবেই আপনি এগিয়ে যাবেন।

অন্য প্রডাক্ট বাদ দিয়ে কেন আপনারটা মানুষ কিনবে?

কিছুটা বুদ্ধি খাটান। একই পণ্য মার্কেটে আরও আছে তাইনা? তাদের পণ্য বাদ দিয়ে মানুষ কেন আপনার পণ্য কিনবে? একটু ভাবুন। নিজেকে দিয়ে বিচার করুন, আপনি হলে কি করবেন? কিছু অফার বা সাথে ফ্রি কিছু দেয়ার ধারনা থেকে বের হয়ে আসুন।

কোয়ালিটির দিকে নজর দিন, মনে রাখবেন মানুষ এখন আর কুয়ান্টিটি দেখে না, সবাই কোয়ালিটি চায়। আপনি কোয়ালিটি পণ্য তৈরি করুন। নতুনত্ব আনুন। দুই একটা উদাহরণ আমি দিতে পারি।

সবাই সাধারণত এক কালারের ডিস্পোজিবল প্লেট/গ্লাস তৈরি করে, আপনি  জন্মদিন কিংবা বিয়ের প্রোগ্রামে ইভেন্ট অনুযায়ী ডিজাইন করে নিতে পারেন। মানে, আপনার প্লেট বা গ্লাসে হ্যাপি বার্থডে লিখে বেলুনের ছবি দিলে অবশ্যই যারা জন্মদিনের জন্য প্লেট/গ্লাস কিনতে আসবে তারা আপনার প্রডাক্ট কিনবে।

বিভিন্ন কালার, শেড কিংবা ডিজাইন করে আপনার প্লেট/গ্লাস তৈরি করুন। এভাবে ভাবুন, আপনার প্রোডাক্টকে কিভাবে অন্যের চেয়ে আলাদা করে তোলা যায়। কাজে দেবে।

ব্র্যান্ড ভ্যালু তৈরি করুন

আপনার প্রোডাক্টের একটা ভাল, গ্রহনযোগ্য, সুন্দর, শ্রুতিমধুর, মনে রাখার মত নাম দিন। সে আপনি যে প্রোডাক্টই তৈরি করেন না কেন। প্রথম দিকে আপনি মানুষের কাছে পৌঁছে যান, একটা সময় মানুষই আপনার কাছে চলে আসবে।

একবার ব্রান্ডিং হয়ে গেলে। একই ব্র্যান্ড নামে আপনার অন্য প্রোডাক্টও মার্কেটে চলবে অনায়াসে।

অল্প টাকায় ব্যবসা

সততা বজায় রাখুন

আর অবশ্যই হ্যা, সততা বজায় রাখুন। মনে রাখবেন,  আপনার কঠোর পরিশ্রম এবং সাথে সততা আপনাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আপনাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হবেনা।

আমার জীবনের কিছু সত্য কাহিনী আজ আমি শেয়ার করছি আপনাদের জন্য, হয়ত কাজে লাগতে পারে। এখানে পড়ুন

মেশিনপত্র আর কাঁচামাল কোথায় পাবেন?

আজকালকার ডিজিটাল যুগে এটা কোন সমস্যাই না। গুগলে সার্চ করে দেখেন এই মেশিন কোন দেশে ভাল বানায়। ম্যানুফ্যাকচারারের সাথে যোগাযোগ করুন। দাম-দর ফাইনাল করে ইম্পোরট করে নিন।

নিজের এক্সপোরট-ইম্পোরট লাইসেন্স না থাকলে পরিচিত আত্তীয়-স্বজন কারও সাহায্য নিন। কম টাকায় পেয়ে যাবেন, আশা করি সমস্যা হবেনা। আর যদি দেশি কম্পানী পেয়ে যান যার রেডি স্টক আছে, তাহলে তার কাছ থেকেও নিয়ে নিতে পারেন, স্পেয়ার পার্টস কিংবা আফটার সেলস সার্ভিস পাবেন তার কাছ থেকে কিন্তু দাম বেশি পরতে পারে স্বাভাবিকভাবেই।

আর কাঁচামালের কথা ভাবছেন, আমার ধারনা দেশেই পেয়ে যাবেন একটু খোঁজ করলেই। যে দেশে কারওয়ান বাজার, নাবাবপুর কিংবা চকবাজার আছে সেই দেশে আপনি কাঁচামাল নিয়ে মোটেই ভাববেন না।

অবশেষে

আসলে অনেক সময় অনেক আইডিয়া মাথায় এসে আবার হারিয়ে যায়, মানে লিখতে ভুলে যাই। তাই আইডিয়াটা লিখে ফেললাম।

পরবর্তী কোন পর্বে আরও ডিটেইল ভাবে মেশিনারিজ কোথা থেকে কিনবেন, কাঁচা মাল কিভাবে সংগ্রহ করবেন, কত টাকা লাগবে ইনভেস্টমেন্ট, ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল কত লাগবে, জায়গা কত দরকার ইত্যাদি নিয়ে বিশদভাবে লেখার ইচ্ছা আছে।

তবে, শুধু আমার এই লেখা পড়েই আপনি লাফ দিয়ে এই ব্যবসায় নেমে পরবেন না আশা করি। আপনার টার্গেট কাস্টমার খুঁজে বের করে মার্কেট এনালাইসিস করে নিন। মাসে আপনার প্রডাক্ট কন্সাম্পশন কত তা বের করুন। এরপর আপনার প্রডাক্টশন ক্যাপাসিটি দেখুন। প্রফিট মার্জিন ক্যাল্কুলেশন করুন। এই ব্যবসা আপনার এলাকায় কতটুকু প্রফিটেবল হয় হিসেব করে নিন, তারপর নামুন।

পরবর্তী লেখা পড়ার আমন্ত্রন রইল। ভাল থাকুন, সুস্থ্য থাকুন। আর হ্যা, বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী কে জানেন তো? জেফ বেজোস। আসুন তার জীবন কাহিনী পরে নেই এখানে

Previous articleইংরেজি নতুন বছরের শুভেচ্ছা সবাইকে।
Next articleফরেক্স ট্রেডিং এ সফলতার উপায়
যে ব্যর্থ সে অজুহাত দেখায়, যে সফল সে গল্প শোনায়। আমি অজুহাত নয় গল্প শোনাতে ভালবাসি। আসুন কিছু গল্প শুনি, নিজের গল্প অন্যকে শুনাই।

1 COMMENT