GPFi Unlimited

একসময় ছিল যখন ইন্টারনেট এর কথা মানুষ কল্পনাও করতে পারতো না। আর সেই থেকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বিস্ময়কর আবিষ্কার হলো এই ইন্টারনেট। ইন্টারনেটকে কেন্দ্র করেই সারা পৃথিবীতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের কোম্পানি দাঁড় করিয়েছে। বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় একটি টেলিকম কোম্পানি হল গ্রামীণফোন। সম্প্রতি গ্রামীনফোন GPFi Unlimited নামে একটি নতুন সুবিধা চালু করেছে। এর মাধ্যমে গ্রাহকেরা কোন প্রকার ইলেকট্রিক তার ছাড়াই ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট কানেকশনের সুবিধা ভোগ করতে পারছেন। তবে অনেকেই সঠিক তথ্য না জানার কারণে ভুল সিদ্ধান্ত এবং জিপিফাই এর আসল সুবিধাটি পাচ্ছেন না। চিন্তার কারণ নেই! আজকের আর্টিকেলেই আমরা গ্রামীনফোনের নতুন সংযোজন GPFi Unlimited নিয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করব। 

আজকের লেখায় যা থাকছে

GPFi Unlimited আসলে কি?

GPFi Unlimited হলো গ্রামীনফোনের একটি আধুনিক ইন্টারনেট সেবা যা ফিক্সড ওয়্যারলেস ব্রডব্যান্ড প্রযুক্তি ব্যবহার করে উচ্চ গতির ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান করে। এই সেবার মূল উদ্দেশ্য হলো শহর এবং গ্রামাঞ্চলের ব্যবহারকারীদের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য এবং দ্রুতগতির ইন্টারনেট সুবিধা নিশ্চিত করা। জিপিফাই সেবার মাধ্যমে গ্রাহকরা সহজে এবং দ্রুত ইন্টারনেট সংযোগ পেতে পারেন, যেখানে ফাইবার বা ক্যাবল ব্রডব্যান্ড পৌঁছানো সম্ভব নয়। এটি ব্যবহারকারীদের জন্য বিভিন্ন সাশ্রয়ী মূল্যের প্ল্যান প্রদান করে, যা বিভিন্ন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী গ্রুপের প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম। সহজ ইন্সটলেশন প্রক্রিয়া এবং স্থিতিশীল সংযোগের জন্য জিপিফাই দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এই সেবার ফলে শিক্ষার্থীরা অনলাইনে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে, ব্যবসায়ীরা অনলাইনে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে এবং পরিবারগুলো বিনোদনের জন্য উচ্চ গতির ইন্টারনেট সুবিধা উপভোগ করতে পারে। GPFi Unlimited তাই দেশের ইন্টারনেট ব্যবহারের অভিজ্ঞতাকে নতুন মাত্রা এনে দিয়েছে।

GPFi Unlimited প্রযুক্তি মূলত কীভাবে কাজ করে?

জিপিফাই (GPFI) হলো গ্রামীনফোনের একটি আধুনিক ফিক্সড ওয়্যারলেস ব্রডব্যান্ড প্রযুক্তি, যা তারবিহীন (wireless) সংযোগের মাধ্যমে উচ্চ গতির ইন্টারনেট সেবা প্রদান করে। এ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে শহর ও গ্রামের সব অঞ্চলে ইন্টারনেট সংযোগ পৌঁছে দেওয়া সহজ হয়। এখানে প্রতিটি ধাপ বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হলো:

ধাপ ১: বেস স্টেশন স্থাপন

বেস স্টেশন হলো একটি কেন্দ্রীয় অবকাঠামো যা মূলত ইন্টারনেট সিগন্যাল উৎপন্ন এবং প্রেরণ করে। বেস স্টেশনগুলি সাধারণত টাওয়ার বা উচ্চ স্থানে স্থাপন করা হয়, যাতে এটি বৃহত্তর এলাকা কভার করতে পারে।

  • নেটওয়ার্ক পরিকল্পনা: প্রথমে একটি পরিকল্পনা তৈরি করা হয়, যেখানে বেস স্টেশন স্থাপনের জন্য উপযুক্ত স্থান নির্ধারণ করা হয়।
  • বেস স্টেশন স্থাপন: বেস স্টেশন স্থাপন করা হয় টাওয়ার বা উচ্চ স্থানে, যাতে সিগন্যাল সহজে বৃহত্তর এলাকায় ছড়িয়ে পড়তে পারে।
  • টেকনোলজি সংযুক্তি: বেস স্টেশনে অত্যাধুনিক টেকনোলজি এবং সরঞ্জাম স্থাপন করা হয়, যা সিগন্যাল উৎপন্ন করে এবং প্রেরণ করে।

ধাপ ২: বেস স্টেশন থেকে সিগন্যাল ট্রান্সমিশন

বেস স্টেশন থেকে ইন্টারনেট সিগন্যাল বেতার তরঙ্গের মাধ্যমে নির্দিষ্ট এলাকার অভ্যন্তরে প্রেরণ করা হয়। এই সিগন্যালগুলি রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি (RF) ব্যবহার করে প্রেরণ করা হয়।

  • তরঙ্গ উৎপাদন: বেস স্টেশন থেকে রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি তরঙ্গ উৎপাদন করা হয়, যা ইন্টারনেট সিগন্যাল বহন করে।
  • সিগন্যাল প্রেরণ: এই সিগন্যালগুলি বেস স্টেশন থেকে নির্দিষ্ট এলাকায় প্রেরণ করা হয়, যা রিসিভার দ্বারা গ্রহণ করা হয়।

ধাপ ৩: গ্রাহকের স্থানে রিসিভার স্থাপন

প্রতিটি গ্রাহকের স্থানে একটি বেতার রিসিভার স্থাপন করা হয়, যা বেস স্টেশন থেকে প্রেরিত সিগন্যাল গ্রহণ করে। রিসিভারটি সাধারণত একটি ছোট্ট এন্টেনা বা ডিশের মতো হয়।

  • রিসিভার স্থাপন: গ্রাহকের বাড়ির ছাদ বা জানালায় রিসিভার স্থাপন করা হয়, যাতে এটি সিগন্যাল ভালোভাবে গ্রহণ করতে পারে।
  • সিগন্যাল গ্রহণ: রিসিভারটি বেস স্টেশন থেকে প্রেরিত সিগন্যাল গ্রহণ করে এবং এটিকে ইন্টারনেট ডেটায় রূপান্তরিত করে।

ধাপ ৪: রিসিভার থেকে রাউটার সংযোগ

রিসিভারটি সিগন্যাল গ্রহণ করার পর এটিকে একটি রাউটারের সাথে সংযুক্ত করা হয়। রাউটারটি মূলত এই সিগন্যালকে প্রসেস করে এবং ওয়াই-ফাই বা ইথারনেট (Ethernet) সংযোগের মাধ্যমে গ্রাহকের ডিভাইসগুলোতে সরবরাহ করে।

কার্যপ্রণালী:
  • রিসিভার থেকে রাউটার: রিসিভার থেকে একটি ইথারনেট কেবল বা বেতার সংযোগের মাধ্যমে রাউটারে সিগন্যাল প্রেরণ করা হয়।
  • রাউটার সংযোগ: রাউটারটি সিগন্যাল প্রসেস করে এবং ইন্টারনেট সিগন্যালকে ওয়াই-ফাই বা ইথারনেটের মাধ্যমে বিতরণ করে।

ধাপ ৫: ইন্টারনেট সংযোগ সক্রিয় করা

সংযোগ স্থাপনের পর গ্রাহকের ইন্টারনেট সংযোগ সক্রিয় করা হয়। এই ধাপে গ্রামীনফোনের টিম গ্রাহকের স্থানে গিয়ে প্রাথমিক সেটআপ সম্পন্ন করে দেয়।

  • সংযোগ পরীক্ষা: সংযোগ স্থাপনের পর এটি ঠিকমতো কাজ করছে কিনা তা পরীক্ষা করা হয়।
  • সংযোগ সক্রিয়করণ: সফল পরীক্ষার পর ইন্টারনেট সংযোগ সক্রিয় করা হয়।

ধাপ ৬: ইন্টারনেট ব্যবহারের শুরু

সংযোগ সক্রিয় হওয়ার পর গ্রাহকরা তাদের ডিভাইস যেমন কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন, ট্যাবলেট ইত্যাদিতে ওয়াই-ফাই বা ইথারনেট সংযোগের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারেন।

  • ডিভাইস সংযোগ: গ্রাহকরা তাদের ডিভাইসগুলোকে ওয়াই-ফাই বা ইথারনেটের মাধ্যমে রাউটারের সাথে সংযুক্ত করেন।
  • ইন্টারনেট ব্যবহার: সংযোগ সফল হওয়ার পর গ্রাহকরা ইন্টারনেট ব্রাউজিং, স্ট্রিমিং, গেমিং ইত্যাদি কাজ করতে পারেন।

কোন প্রকার ইলেকট্রিক তার ব্যবহার হয় না

জিপিফাই প্রযুক্তিতে কোন প্রকার ইলেকট্রিক তার ব্যবহার করা হয় না। এটি সম্পূর্ণ বেতার সংযোগের মাধ্যমে কাজ করে। বেস স্টেশন থেকে সিগন্যাল ট্রান্সমিশন এবং গ্রাহকের স্থানে রিসিভারের মাধ্যমে সিগন্যাল গ্রহণ, সবকিছুই বেতার তরঙ্গ ব্যবহার করে সম্পন্ন হয়। এ কারণে গ্রাহকদের বাড়িতে কোন প্রকার ফাইবার অপটিক্স বা কপার তার স্থাপনের প্রয়োজন হয় না, যা ইনস্টলেশন প্রক্রিয়াকে সহজ ও সাশ্রয়ী করে তুলেছে।

GPFi Unlimited এর সুবিধা কি কি

জিপিফাই (GPFI) হলো গ্রামীনফোনের একটি উন্নত ফিক্সড ওয়্যারলেস ব্রডব্যান্ড সেবা, যা উচ্চ গতির ইন্টারনেট সুবিধা প্রদান করে। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে গ্রামীনফোন এমন সব সুবিধা প্রদান করছে যা ব্যবহারকারীদের জীবনকে আরও সহজ ও সুবিধাজনক করে তুলছে। নিচে জিপিফাই-এর বিভিন্ন সুবিধা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

১. উচ্চ গতির ইন্টারনেট

জিপিফাই উচ্চ গতির ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান করে যা স্ট্রিমিং, গেমিং, ভিডিও কল, এবং অন্যান্য ডেটা-ইনটেনসিভ কাজ সহজ করে তোলে। বর্তমানে ইন্টারনেট সেবা ব্যবহারকারীদের জন্য দ্রুত গতি একটি অপরিহার্য চাহিদা হয়ে দাঁড়িয়েছে। জিপিফাই এই চাহিদা পূরণে সক্ষম।

  • স্ট্রিমিং: ব্যবহারকারীরা কোন প্রকার ল্যাগ ছাড়াই উচ্চ রেজোলিউশনের ভিডিও স্ট্রিম করতে পারেন। নেটফ্লিক্স, ইউটিউব, হুলু প্রভৃতি প্ল্যাটফর্মগুলোতে 4K ভিডিও স্ট্রিমিং করা সহজ হয়ে যায়।
  • অনলাইন গেমিং: গেমাররা লো ল্যাটেন্সি এবং উচ্চ গতির সংযোগ পেয়ে একটি সাবলীল গেমিং অভিজ্ঞতা উপভোগ করতে পারেন। মাল্টিপ্লেয়ার গেম খেলা, লাইভ স্ট্রিমিং করা এবং রিয়েল-টাইম গেমপ্লে সবকিছুই হয় দ্রুত এবং সাবলীল।
  • দ্রুত ডাউনলোড ও আপলোড: ফাইল ডাউনলোড এবং আপলোড করা সহজ ও দ্রুত হয়। বড় ফাইল শেয়ারিং, ক্লাউড স্টোরেজে ফাইল আপলোড করা এবং বিভিন্ন সফটওয়্যার বা গেম ডাউনলোড করা সহজ হয়ে যায়।

২. বিস্তৃত কভারেজ

জিপিফাই প্রযুক্তি বেতার সংযোগ ব্যবহার করে, যার ফলে এটি শহর থেকে গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকায় ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান করতে সক্ষম। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও এটি ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দিতে সক্ষম।

  • গ্রামাঞ্চলে সংযোগ: যেখানে তারবিহীন সংযোগের সুযোগ কম, সেখানে জিপিফাই একটি কার্যকর সমাধান। গ্রামাঞ্চলের মানুষের জন্য ইন্টারনেট সেবা সহজলভ্য করে তোলে।
  • দুর্গম এলাকায় ইন্টারনেট: দুর্লভ এবং দুর্গম অঞ্চলেও জিপিফাই এর মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগ পৌঁছে দেওয়া সম্ভব। এর ফলে দূরবর্তী অঞ্চলের মানুষও ইন্টারনেটের সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।

৩. সহজ ইনস্টলেশন

জিপিফাই-এর ইনস্টলেশন প্রক্রিয়া অত্যন্ত সহজ ও দ্রুত। কোন প্রকার ফাইবার বা কপার তারের প্রয়োজন হয় না। এটি সম্পূর্ণ তারবিহীন সংযোগের মাধ্যমে কাজ করে।

  • স্বল্প সময়ে সংযোগ: গ্রাহকরা অল্প সময়েই ইন্টারনেট সংযোগ পেতে পারেন। কোন প্রকার জটিলতার দরকার হয় না।
  • কম ঝামেলা: কোন প্রকার ক্যাবলিং বা জটিল ইনস্টলেশন প্রক্রিয়া নেই, যা গ্রাহকদের জন্য ঝামেলামুক্ত। এতে ইন্সটলেশনের খরচ ও সময়ও বেঁচে যায়।

৪. স্থিতিশীল সংযোগ

জিপিফাই এর সংযোগ অত্যন্ত স্থিতিশীল, যা বিভিন্ন আবহাওয়ার পরিস্থিতিতেও নির্ভরযোগ্য ইন্টারনেট সেবা প্রদান করে। এর ফলে যে কোন পরিস্থিতিতেই ইন্টারনেট সেবা নিরবচ্ছিন্ন থাকে।

  • নির্ভরযোগ্য ইন্টারনেট: ব্যবহারকারীরা ইন্টারনেট সংযোগে কোন প্রকার বিঘ্ন ছাড়াই নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করতে পারেন। এমনকি বৈরী আবহাওয়ার সময়েও ইন্টারনেট সেবা সচল থাকে।
  • কনফারেন্স কল: অফিস ও শিক্ষার জন্য ভিডিও কনফারেন্স কল নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করা সম্ভব। এর ফলে দূরবর্তী অফিসের মিটিং, ক্লাস বা অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজ সহজে করা যায়।

৫. বিভিন্ন প্ল্যানের সুবিধা

জিপিফাই বিভিন্ন ধরণের ইন্টারনেট প্ল্যান অফার করে যা বিভিন্ন প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করা যায়। ব্যবহারকারীরা তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী উপযুক্ত প্ল্যান বেছে নিতে পারেন।

  • গ্রাহক বান্ধব: গ্রাহকরা তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী প্ল্যান বেছে নিতে পারেন। এটি তাদের ব্যবহার এবং বাজেটের উপর নির্ভর করে।
  • সাশ্রয়ী মূল্য: বিভিন্ন সাশ্রয়ী মূল্যের প্ল্যান পাওয়া যায়, যা গ্রাহকদের জন্য সহজলভ্য। এতে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ তাদের প্রয়োজনীয় ইন্টারনেট সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।

৬. গ্রাহক সেবা

জিপিফাই গ্রাহকদের জন্য উন্নত গ্রাহক সেবা প্রদান করে, যা যে কোন সমস্যার দ্রুত সমাধান নিশ্চিত করে। গ্রাহকদের সন্তুষ্টি অর্জন করাই এ সেবার মূল লক্ষ্য।

  • দ্রুত সমাধান: যে কোন সমস্যা হলে গ্রাহকরা দ্রুত সমাধান পেয়ে থাকেন। তাদের সমস্যার সমাধান করতে কোন প্রকার দেরি হয় না।
  • সহায়তা: বিভিন্ন তথ্য ও সহায়তা পাওয়া যায় সহজেই, যা গ্রাহকদের জন্য উপকারী। ২৪/৭ গ্রাহক সেবা পাওয়া যায়।

৭. পরিবেশ বান্ধব

জিপিফাই ফিক্সড ওয়্যারলেস প্রযুক্তি ব্যবহার করে, যার ফলে তারের ব্যবহার কমানো যায় এবং পরিবেশে ক্ষতির সম্ভাবনা কমে। এটি একটি পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তি।

  • কম তারের ব্যবহার: ইলেকট্রিক তারের ব্যবহার না থাকায় পরিবেশ দূষণের ঝুঁকি কমে। তারবিহীন সংযোগের ফলে পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব কমে।
  • সাশ্রয়ী প্রযুক্তি: কম পরিমাণ যন্ত্রাংশ ব্যবহারের ফলে এটি আরও সাশ্রয়ী হয়। এতে খরচও কম হয় এবং কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়।

৮. বিভিন্ন ওটিটি প্ল্যাটফর্মের ফ্রি এক্সেস

আপনি যদি অনলাইনে বিভিন্ন ওয়েব সিরিজ দেখতে অভ্যস্ত হয়ে থাকেন কিংবা দেখতে ইচ্ছুক হন তাহলে এটি আপনার জন্য একটি দারুন সুযোগ হতে পারে। কেননা জিপিফাই তাদের গ্রাহকদের জন্য বেশ কিছু ওটিটি প্লাটফর্মে ফ্রী এক্সেস প্রদান করে থাকেন। 

  • চরকি
  • হইচই
  • সনি লিভ
  • টি-স্পোর্টস
  • বায়োস্কোপ এবং আরো বেশ কিছু জনপ্রিয় স্ট্রিমিং ওয়েবসাইট। 

GPFi Unlimited এর অসুবিধা কি কি

যদিও জিপিফাই প্রযুক্তি উচ্চ গতির ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান করে এবং অনেক সুবিধা নিয়ে আসে, তবুও কিছু অসুবিধা এবং সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সংকেতের স্থিতিশীলতা, উচ্চতর মূল্য, সীমিত ব্যান্ডউইথ, পরিষেবা কভারেজ, ইন্টারফেরেন্স, ইনস্টলেশন এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা থাকতে পারে। এছাড়াও, নিরাপত্তা এবং তথ্যপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রেও কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। নিচে জিপিফাই-এর বিভিন্ন অসুবিধা এবং সেগুলির সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

১. সংকেতের অস্থিতিশীলতা

জিপিফাই প্রযুক্তি বেতার সংকেতের মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান করে। এই বেতার সংকেতের স্থিতিশীলতা অনেক সময় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। বেতার সংযোগের ক্ষেত্রে সংকেতের গুণমান অনেক সময় পরিবর্তনশীল হতে পারে।

  • আবহাওয়ার প্রভাব: খারাপ আবহাওয়া, যেমন বৃষ্টি, ঝড় বা কুয়াশার সময় সংকেতের গুণমান কমে যেতে পারে, যার ফলে ইন্টারনেট সংযোগে সমস্যা হতে পারে।
    • কারণ: বেতার সংকেত বিভিন্ন ধরনের আবহাওয়ার কারণে প্রভাবিত হয়। যেমন, বৃষ্টির পানি সংকেতের পথে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
    • প্রভাব: ইন্টারনেট সংযোগের গতি কমে যেতে পারে বা সংযোগ সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন হতে পারে।
  • প্রাকৃতিক বাধা: বড় বড় ভবন, গাছ বা পাহাড়ের মতো প্রাকৃতিক বাধাগুলি সংকেতের গুণমান এবং স্থিতিশীলতায় প্রভাব ফেলতে পারে।
    • কারণ: সংকেতের পথ অবরোধ হলে সংকেতের শক্তি কমে যায় এবং সংযোগ দুর্বল হয়।
    • প্রভাব: ইন্টারনেটের গতি এবং স্থিতিশীলতায় সমস্যা হতে পারে, বিশেষ করে অভ্যন্তরীণ স্থানগুলোতে।

২. উচ্চতর মূল্য

জিপিফাই-এর কিছু প্ল্যান এবং প্যাকেজের মূল্য অন্যান্য ব্রডব্যান্ড সেবার তুলনায় বেশি হতে পারে। উচ্চতর মূল্য অনেক গ্রাহকের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়।

  • সাশ্রয়ী নয়: অনেক গ্রাহকের জন্য এই সেবা সাশ্রয়ী নয়, বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য।
    • কারণ: উচ্চ প্রযুক্তি এবং উন্নততর সেবার জন্য ব্যবহৃত সরঞ্জাম এবং রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বেশি হতে পারে।
    • প্রভাব: নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ইন্টারনেট সংযোগ গ্রহণ করা কঠিন হয়ে যায়।
  • উচ্চ মূল্য: বিশেষত উচ্চ গতির প্ল্যানগুলির জন্য মূল্য বেশ চড়া হতে পারে, যা কিছু গ্রাহকদের জন্য ব্যয়বহুল।
    • কারণ: উচ্চ গতির ইন্টারনেট সরবরাহের জন্য উন্নততর সরঞ্জাম এবং পরিষেবার প্রয়োজন হয়।
    • প্রভাব: অনেক গ্রাহক ইন্টারনেট সেবা গ্রহণ করতে পারেন না বা কম গতির প্ল্যান বেছে নেন।

৩. সীমিত ব্যান্ডউইথ

জিপিফাই প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রদত্ত ব্যান্ডউইথ কিছু ক্ষেত্রে সীমিত হতে পারে। সীমিত ব্যান্ডউইথের ফলে উচ্চ ট্রাফিকের সময় সংযোগের গতি কমে যেতে পারে।

  • উচ্চ ট্রাফিক: অনেক সময়, বিশেষ করে উচ্চ ব্যবহার সময়ে, ব্যান্ডউইথের সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে, যার ফলে ইন্টারনেটের গতি কমে যেতে পারে।
    • কারণ: একই সময়ে অনেক ব্যবহারকারী একই ব্যান্ডউইথ শেয়ার করলে ব্যান্ডউইথের চাহিদা বেড়ে যায়।
    • প্রভাব: ইন্টারনেটের গতি কমে যায়, স্ট্রিমিং এবং ডাউনলোডে সমস্যা হতে পারে।
  • ডেটা ক্যাপ: কিছু প্ল্যান এবং প্যাকেজে ডেটা ব্যবহারের সীমা থাকতে পারে, যা অতিরিক্ত ব্যবহারে বাড়তি খরচ হতে পারে।
    • কারণ: ডেটা ব্যবহারের সীমা প্রয়োজনীয় ব্যান্ডউইথ সংরক্ষণের জন্য প্রয়োগ করা হয়।
    • প্রভাব: অতিরিক্ত ডেটা ব্যবহারের জন্য বাড়তি চার্জ প্রযোজ্য হতে পারে, যা গ্রাহকদের জন্য ব্যয়বহুল হতে পারে।

৪. পরিষেবা এবং কভারেজ

যদিও জিপিফাই বিভিন্ন অঞ্চলে বিস্তৃত, তবুও কিছু অঞ্চল এবং এলাকায় পরিষেবা প্রদানে সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে।

  • অক্লিষ্ট অঞ্চল: কিছু দূরবর্তী এবং দুর্গম অঞ্চলে এই সেবার কভারেজ সীমিত হতে পারে।
    • কারণ: সেসব এলাকায় বেস স্টেশন এবং রিসিভার সিস্টেমের অভাব থাকতে পারে।
    • প্রভাব: সেই এলাকায় সংযোগের গুণমান এবং স্থিতিশীলতায় সমস্যা হতে পারে।
  • সংযোগের ঘাটতি: নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণে কিছু স্থানে সংযোগের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
    • কারণ: নেটওয়ার্ক রক্ষণাবেক্ষণ বা আপগ্রেডের সময় সংযোগের গুণমান প্রভাবিত হতে পারে।
    • প্রভাব: গ্রাহকদের ইন্টারনেট ব্যবহারের সময় সমস্যা হতে পারে।

৫. ইন্টারফেরেন্স (বাধা)

বেতার সংযোগের ক্ষেত্রে ইন্টারফেরেন্স একটি বড় সমস্যা হতে পারে। অন্যান্য ডিভাইসের সিগন্যালের কারণে ইন্টারফেরেন্স হতে পারে।

  • অন্যান্য ডিভাইসের প্রভাব: ঘরের অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইস, যেমন মাইক্রোওয়েভ ওভেন বা ওয়্যারলেস ফোনের সিগন্যালের সাথে ইন্টারফেরেন্স হতে পারে, যা ইন্টারনেটের গতি এবং স্থিতিশীলতায় প্রভাব ফেলতে পারে।
    • কারণ: একই ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ডে অনেক ডিভাইসের সিগন্যাল ব্যবহারের ফলে ইন্টারফেরেন্স হতে পারে।
    • প্রভাব: ইন্টারনেটের গতি কমে যায় এবং সংযোগ বিচ্ছিন্ন হতে পারে।
  • সিগন্যালের বিঘ্ন: একই ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ডে অনেক ডিভাইসের সিগন্যাল ব্যবহারের ফলে ইন্টারফেরেন্স হতে পারে, যা সংযোগে বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে।
    • কারণ: সিগন্যালের ওভারল্যাপিং এবং বিরোধের ফলে ইন্টারফেরেন্স হয়।
    • প্রভাব: ইন্টারনেট ব্যবহারের সময় সংযোগের গুণমান কমে যায়।

৬. ইনস্টলেশন এবং সরঞ্জাম

যদিও জিপিফাই ইনস্টলেশন প্রক্রিয়া সহজ, কিছু ক্ষেত্রে সরঞ্জাম এবং ইনস্টলেশন সংক্রান্ত সমস্যা হতে পারে।

  • সরঞ্জামের সমস্যা: কখনও কখনও রিসিভার বা রাউটারের সমস্যা হতে পারে, যা সংযোগে বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে।
    • কারণ: ব্যবহৃত সরঞ্জামের মান বা স্থায়িত্ব কম হলে সমস্যা হতে পারে।
    • প্রভাব: ইন্টারনেট সংযোগে সমস্যা হতে পারে এবং প্রায়ই রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন হয়।
  • ইনস্টলেশনের সময়কাল: কিছু ক্ষেত্রে ইনস্টলেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে বেশি সময় লাগতে পারে, বিশেষত যদি গ্রাহকের স্থানে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো না থাকে।
    • কারণ: প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম এবং প্রযুক্তি প্রস্তুত করতে সময় লাগে।
    • প্রভাব: গ্রাহকরা দ্রুত সংযোগ পেতে বিলম্বিত হন এবং ইন্টারনেট ব্যবহার শুরু করতে সময় লাগে।

৭. প্রযুক্তিগত সহায়তা

প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা হতে পারে। গ্রাহক সহায়তার ক্ষেত্রে বিলম্ব বা সমস্যা হতে পারে।

  • সাড়া পাওয়া: কখনও কখনও প্রযুক্তিগত সহায়তা পেতে দেরি হতে পারে, যা গ্রাহকদের জন্য অসুবিধাজনক হতে পারে।
    • কারণ: প্রযুক্তিগত সহায়তার ব্যবস্থাপনা এবং প্রক্রিয়া জটিল হতে পারে।
    • প্রভাব: গ্রাহকরা সমস্যার সমাধান পেতে সময় লাগে এবং ইন্টারনেট ব্যবহারে বিঘ্ন ঘটে।
  • সমস্যার সমাধান: কিছু ক্ষেত্রে সমস্যার সমাধান পেতে সময় লাগতে পারে, যা গ্রাহকদের জন্য বিরক্তিকর হতে পারে।
    • কারণ: জটিল প্রযুক্তিগত সমস্যার সমাধান করতে বিশেষজ্ঞ সহায়তার প্রয়োজন হতে পারে।
    • প্রভাব: গ্রাহকরা সমস্যার সমাধান না পাওয়া পর্যন্ত ইন্টারনেট সেবা ব্যবহার করতে সমস্যায় পড়তে পারেন।

৮. তথ্যপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ

ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী কোম্পানিগুলি প্রায়ই তথ্যপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে, যা গ্রাহকদের জন্য অসুবিধাজনক হতে পারে।

  • থ্রোটলিং: কিছু ক্ষেত্রে ইন্টারনেট গতি নিয়ন্ত্রণ করা হতে পারে, বিশেষ করে উচ্চ ব্যবহার সময়ে।
    • কারণ: নেটওয়ার্কের উপর চাপ কমাতে থ্রোটলিং করা হয়।
    • প্রভাব: ইন্টারনেটের গতি কমে যায় এবং ব্যবহারকারীরা স্বাভাবিক ব্যবহারে সমস্যা অনুভব করেন।
  • নেট নিউট্রালিটির অভাব: সব ধরনের তথ্য প্রবাহ সমানভাবে পরিচালিত না হলে গ্রাহকরা কিছু সেবা ব্যবহারে সমস্যায় পড়তে পারেন।
    • কারণ: ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী কোম্পানিগুলি কিছু নির্দিষ্ট সেবাকে অগ্রাধিকার দেয়।
    • প্রভাব: গ্রাহকরা কিছু নির্দিষ্ট ওয়েবসাইট বা সেবা ব্যবহারে সমস্যা অনুভব করেন।

GPFi Unlimited এর অ্যাভেইলেবিলিটি?

গ্রামীনফোনের এই প্রযুক্তির আরেকটি বড় সমস্যা হলো এখনো এর কাভারেজ সারা বাংলাদেশ পর্যন্ত পৌছায় নি। কেবলমাত্র বড় বড় মেগা সিটিগুলোতেই জিপিফাই সুবিধা প্রদান করে আসছে গ্রামীনফোন কোম্পানী। তবে গ্রামীনফোন তাদের গ্রাহকদের আশ্বাস দিচ্ছে যে খুব শীঘ্রই তারা সারাদেশে তাদের এই জিপিফাই ইন্টারনেট সেবা চালু করবে। জিপিফাই সেবা ধীরে ধীরে সারা দেশে সম্প্রসারিত হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকার জিপিফাই সেবার অ্যাভেইলেবিলিটি চেক করতে পারেন গ্রামীণফোনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে। সেখানে নির্দিষ্ট জেলা ও এলাকা নির্বাচন করে সহজেই জানতে পারবেন আপনার এলাকায় এই সেবা রয়েছে কিনা। আমাদের জানামতে সর্বশেষ তথ্যানুসারে বর্তমানে বাংলাদেশের নিম্নবর্ণিত এলাকায় GPFi Unlimited সুবিধা রয়েছে। 

  • ঢাকা
  • চট্টগ্রাম
  • সিলেট এবং
  • রাজশাহী

তারপরেও আপনি ইচ্ছে করলে গ্রামীনফোনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের এখানে গিয়ে আরেকবার চেক করে নিতে পারেন আপনার এলাকায় জিপিফাই সার্ভিস চালু রয়েছে কিনা। 

GPFi Unlimited কি কি প্যাকেজ রয়েছে

জিপিফাই চালু করার প্রথমেই  আপনি পাবেন এক মাসের ফ্রি সাবস্ক্রিপশন। আনলিমিটেড ইন্টারনেট এর সুবিধার জন্য গ্রামীণফোন তাদের গ্রাহকদের চাহিদার কথা বিবেচনা করে বেশ কিছু প্যাকেজ চালু করেছে। প্রথম মাসের পর আপনি ইন্টারনেটের স্পিডের উপর পছন্দের একটি প্যাকেজ বেছে নিতে পারবেন। নিচে তার সংক্ষেপে  বর্ণনা দেয়া হলো-

  • ২৫ এমবিপিএস: এই প্যাকেজটির জন্য আপনাকে প্রতিমাসে ১০০০ টাকা দিতে হবে। ইন্টারনেটের এই প্যাকেজটিতে আপনি পাবেন প্রতি সেকেন্ডে ২৫ মেগাবাইট এর স্পিড। একইসাথে সর্বোচ্চ ৩২ টি পর্যন্ত ডিভাইস কানেক্টেড রাখতে পারবেন। 
  • ৩০ এমবিপিএস: এ প্যাকেজটি মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি মাসে ১৩০০ টাকা। এক্ষেত্রে প্রতি সেকেন্ডে স্পিড পাবেন ৩০ মেগাবাইট। এই প্যাকেজেও একই সাথে ৩২ টি ডিভাইস কানেক্ট করা সম্ভব।
  • ৪০ এমবিপিএস: গ্রামীণফোন তাদের সর্বোচ্চ ইন্টারনেট স্পিডের এই প্যাকেজটির মূল্য নির্ধারণ করেছে ১৯০০ টাকা। প্রতি মাসে ১৯০০ টাকা দিলে গ্রামীণফোন তাদের জিপিফাই গ্রাহকদের প্রতি সেকেন্ডে ৪০ মেগাবাইট স্পিড প্রদান করবে। 

GPFi Unlimited মূলত কাদের জন্য বেশি উপযুক্ত

তবে প্রশ্ন হচ্ছে আপনি কি আসলেই জিপিফাই এর সেবা গ্রহণ করার জন্য উপযুক্ত কিনা? মূলত গ্রামীণফোন তাদের এই সেবা চালু করে এমন সব মানুষের জন্য যাদের সাধারণ ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট কানেকশন সেবা সঠিকভাবে পায়না। কারণ এক্ষেত্রে ইথারনেট কানেকশন এর তুলনায় স্পিড অনেক কম পাওয়া যায়। আর তাছাড়া তাদের প্যাকেজের মূল্যও অনেক বেশি। আপনি যদি প্রতিমাসে অনেক বেশি পরিমাণে ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকেন এবং এই রেঞ্জটি ১০০ থেকে ২০০ জিবি হয়ে থাকে এবং আপনার এলাকায় সাধারণ ব্রডব্যান্ড ওয়াইফাই ব্যবস্থা না থাকে তবেই কেবল আপনি গ্রামীণফোনের জিপিফাই প্রযুক্তি ব্যবহার করে লাভবান হতে পারেন। কেননা আপনার ইন্টারনেট চাহিদা যদি প্রতিমাসে  ৩০ থেকে ৪০ জিবি হয়ে থাকে, তাহলে এর চেয়ে কম দামেই আপনি গ্রামীণফোনের ইন্টারনেট প্যাকেজ বেছে নিতে পারবেন। আশা করি বুঝতে পেরেছেন আসলেই  GPFi Unlimited আপনার জন্য কি না!

GPFi Unlimited সুবিধা কিভাবে পাবো

জিপিফাই (GPFI) ইন্টারনেট সুবিধা গ্রহণ করার জন্য আপনাকে কিছু ধাপ অনুসরণ করতে হবে। এখানে আমরা ধাপে ধাপে GPFi Unlimited ইন্টারনেট সুবিধা পাওয়ার প্রক্রিয়া বর্ণনা করছি:

১. GPFi Unlimited এলাকার কভারেজ পরীক্ষা

প্রথম ধাপ হলো, আপনার এলাকায় জিপিফাই সেবার কভারেজ রয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করা।

  • ওয়েবসাইট ভিজিট: গ্রামীণফোনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে কভারেজ চেকার ব্যবহার করে আপনার এলাকার কভারেজ পরীক্ষা করতে পারেন।
  • কাস্টমার কেয়ার: আপনি গ্রামীণফোনের কাস্টমার কেয়ার নম্বরে কল করে কভারেজের ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে পারেন।

২. GPFi Unlimited প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস সংগ্রহ

জিপিফাই সংযোগের জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস সংগ্রহ করতে হবে।

  • জাতীয় পরিচয়পত্র: আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের একটি কপি প্রস্তুত করুন।
  • ঠিকানা প্রমাণ: আপনার ঠিকানা প্রমাণের জন্য কোনো বৈধ ডকুমেন্ট (যেমন, ইউটিলিটি বিল) সংগ্রহ করুন।
  • ফটো: একটি পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ফটো প্রস্তুত রাখুন।

৩. GPFi Unlimitedপ্যাকেজ নির্বাচন

আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী একটি উপযুক্ত প্যাকেজ নির্বাচন করতে হবে।

  • ওয়েবসাইট পর্যালোচনা: গ্রামীণফোনের ওয়েবসাইটে গিয়ে বিভিন্ন প্যাকেজ এবং তাদের সুবিধাগুলি পর্যালোচনা করুন।
  • কাস্টমার কেয়ার পরামর্শ: কাস্টমার কেয়ার প্রতিনিধির সাথে যোগাযোগ করে আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী উপযুক্ত প্যাকেজ সম্পর্কে পরামর্শ নিন।

৪. GPFi Unlimited আবেদন জমা

আপনার পছন্দের প্যাকেজের জন্য আবেদন জমা দিতে হবে।

  • অনলাইন আবেদন: গ্রামীণফোনের ওয়েবসাইটে গিয়ে অনলাইনে আবেদন ফর্ম পূরণ করে জমা দিতে পারেন।
  • সরাসরি আবেদন: নিকটবর্তী গ্রামীণফোন সার্ভিস সেন্টারে গিয়ে সরাসরি আবেদন করতে পারেন।

৫. GPFi Unlimited ইনস্টলেশন প্রক্রিয়া

আবেদন গ্রহণের পর, গ্রামীণফোনের টিম আপনার স্থানে এসে ইনস্টলেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে।

  • শিডিউল নির্ধারণ: আবেদন গ্রহণের পর ইনস্টলেশন টিম আপনার সাথে যোগাযোগ করে ইনস্টলেশনের শিডিউল নির্ধারণ করবে।
  • ইনস্টলেশন: নির্ধারিত সময়ে টিম আপনার স্থানে এসে রিসিভার এবং রাউটার ইন্সটল করবে।

৬. GPFi Unlimited সংযোগ পরীক্ষা

ইনস্টলেশনের পর, সংযোগটি পরীক্ষা করতে হবে।

  • টেস্ট রান: ইনস্টলেশন টিম সংযোগটি চালু করে বিভিন্ন ডিভাইসে ইন্টারনেট স্পিড এবং স্থিতিশীলতা পরীক্ষা করবে।
  • গ্রাহক সেবা: সংযোগে কোনো সমস্যা হলে কাস্টমার কেয়ারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

৭. সেবা গ্রহণ এবং বিলিং

সংযোগ স্থাপনের পর, সেবা গ্রহণ শুরু হবে এবং মাসিক বিলিং শুরু হবে।

  • বিলিং তথ্য: মাসিক বিলিং তথ্য আপনার ইমেইল বা মেসেজের মাধ্যমে প্রাপ্ত হবে।
  • পেমেন্ট অপশন: গ্রামীণফোনের বিলিং পোর্টালে গিয়ে বিভিন্ন পেমেন্ট অপশন ব্যবহার করে বিল পরিশোধ করতে পারবেন।

উপসংহার

GPFi Unlimited প্রযুক্তি একটি অত্যাধুনিক ফিক্সড ওয়্যারলেস ব্রডব্যান্ড সেবা যা তারবিহীন সংযোগের মাধ্যমে উচ্চ গতির ইন্টারনেট সেবা প্রদান করে। এই প্রযুক্তি শহর ও গ্রামের সব অঞ্চলে ইন্টারনেট সংযোগ পৌঁছে দেওয়া সহজ করেছে এবং এর মাধ্যমে ডিজিটাল যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। তবে এখনো গ্রামীণফোন তাদের জিপিফাই সেবা বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছাতে পারেনি। তবে শীঘ্রই এটি বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামে চলে আসবে বলে আশা করা যায়। আর তাই সার্বজনীন ইন্টারনেট সম্ভাবনার নতুন দুয়ার হিসেবে জিপিফাই কে অনেকেই বিবেচনা করছেন। তবে এরও বেশ কিছু লিমিটেশন রয়েছে। সেগুলো আমরা আমাদের আজকের সম্পূর্ণ আর্টিকেল জুড়েই আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। ধন্যবাদ। সাথে থাকবেন। 

Previous articleবাংলাদেশের সেরা দশটি এনজিও: সমাজের অগ্রগতির পথিকৃত!
Next articleবাংলাদেশের সেরা দশটি কলেজ- হাজারো শিক্ষার্থীর স্বপ্ন!
Md. Zakaria Ahomed
I am zakaria. I am small blogger. Side by side I am writing for others blog also. Feel free to knock me if you need me.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here