ইন্টারনেটের এই যুগে পাসওয়ার্ড শব্দটার সাথে আমরা কম বেশি সবাই পরিচিত। কিন্তু এর গুরুত্ব অনেকেই বুঝতে চাই না। আপনার এটিএম কার্ড, বিকাশ কিংবা রকেটের পিন কোডের মতই ইন্টারনেটের বিভিন্ন পাসওয়ার্ডও অনেক গুরুত্ব বহন করে। ইন্টারনেটের বিভিন্ন পাসওয়ার্ড বলতে আপনার বাসার ওয়াইফাই রাউটারের পাসওয়ার্ড থেকে শুরু করে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে আপনার একাউন্টের পাসওয়ার্ড সমান গুরুত্বপূর্ণ। আজকের ব্লগে আমি আপনাদের পাসওয়ার্ড কেন গুরুত্বপূর্ণ, হ্যাকিং কেন হয় এবং কিভাবে আপনি আপনার পাসওয়ার্ড আরও সিকিউরড করতে পারবেন সেব্যাপারে একটা পরিস্কার ধারণা দেবার চেষ্টা করব। আশা করি সাথেই থাকবেন এবং ধৈর্য সহকারে পুরো ব্লগটি পড়বেন।
আপনার পাসওয়ার্ড কেন গুরুত্বপূর্ণ
ছোটবেলায় পড়া তিন গোয়েন্দা কিংবা মাসুদ রানা স্পাই থ্রিলার কাহিনী নিশ্চয়ই মনে আছে। অপরিচিত লোকের কাছে কোন কিছু ডেলিভারি দিতে চাইলে কিভাবে তাকে চিনতে পারবে এজন্য একটা কোড- ওয়ার্ড দেয়া হত যাতে সঠিক ভাবে পণ্য ডেলিভারি দিতে পারে। কখনওবা ১০০ ডলারে নোট ছিড়ে দুইজনকে দেয়া হত, তারা দেখা হলে দুইজন দুইজনকে ওই ছিড়া নোট দেখাত। মিলে গেলে তারা তাদের প্রোডাক্ট লেনদেন করত।এটা একপ্রকার পাসওয়ার্ড। আধুনিক ইন্টারনেটের যুগে এখন পাসওয়ার্ড এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে গুগল, মাইক্রোসফটের মত কোম্পানি কোটি কোটি ডলার খরচ করছে শুধু সিকিউরিটির পেছনে।
আপনি হোমড়া-চোমড়া হোন আর যদু মদুই হন আপনার পাসওয়ার্ড সিকিউরড হওয়া খুবই জরুরী। অনেক হ্যাকাররা বসে আছে আপনার পাসওয়ার্ড হ্যাকিং করার জন্য। আপনার ইমেইল পাসওয়ার্ড থেকে শুরু করে সোশ্যাল মিডিয়া সাইটের পাসওয়ার্ড সবই তারা চাইছে হ্যাক করতে। ভাবতে পারেন, তাদের কি লাভ? আমি ত এত গুরুত্বপূর্ণ কেও না।
বেশিরভাগ সময় কিন্তু হ্যাকাররা আপনার ইমেল বা ফেসবুক একাউন্ট হ্যাক করে আপনার কাছে টাকা দাবি করে না, তাহলে? একটা দীর্ঘদিনের ব্যবহিত ইমেইল এড্রেস কিংবা সোশ্যাল মিডিয়া সাইটের একাউন্ট অনেক দামি। তারা এগুলো ব্যবহার করে অনেক ফায়দা লুটতে পারে। আপনার নামে অন্যকোথাও একাউন্ট খুলতে পারে, আপনার নামে অন্য কারও কাছে টাকা লোন চাইতে পারে ইত্যাদি আরও অনেক কিছু। হ্যাকিং শুধু আপনার কাছে টাকা দাবি করার জন্যই নয়।
আপনার ইমেইল হ্যাক করে তন্য তন্য করে খুজবে, তাদের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু আছে কিনা। আপনি অনেক সময় আপনার প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট স্ক্যান করে ক্লাউডে রেখে দেন, আপনি জানবেনও না সেই ডকুমেন্ট দিয়ে তারা কি ক্রাইম করবে। আপনার নামে ফলস ব্যাংক একাউন্ট করে অবৈধ লেনদেন করতে পারে। অনেক কিছুই সম্ভব।
উপরের আলোচনা থেকে হয়ত কিছুটা বুঝতে পেরেছেন পাসওয়ার্ড কেন গুরুত্বপূর্ণ। এত গুরুত্বপূর্ণ জিনিস অবশ্যই আপনাকে সিকিউরড করে রাখতে হবে যাতে কেও হ্যাকিং করতে না পারে। এবারে আসুন জানি কিভাবে আপনি আপনার পাসওয়ার্ড সিকিউরড করতে পারেন।
পাসওয়ার্ড দেবার সময় কি কি জিনিষ নজর রাখবেন
১. পাসওয়ার্ড হিসেবে আপনি আপনার নাম, মোবাইল নম্বর, জন্ম তারিখ-মাস-সাল, বয়স, বাচ্চার নাম, পোষা প্রানির নাম, প্রিয় রং, গানের লাইন, বাসার ঠিকানা ব্যবহার করবেন না। এতে শুধু হ্যাকার না, আপনার পরিচিত কেও আপনার একাউন্ট সহজেই হ্যাক করতে পারবে।
২. পাসওয়ার্ড হিসেবে আপনি কখনই কোন ভাষার ডিকশনারি ওয়ার্ড ব্যবহার করবেন না। হ্যাকাররা কোন একাউন্ট হ্যাক করতে গেলে প্রথমে কাজটি করে তা হল পৃথিবীর সব ভাষার সকল ডিকশনারি ওয়ার্ড ব্যবহার করে চেষ্টা করে। ভাববেন না তারা ম্যানুয়ালি চেষ্টা করে, তাদের সফটওয়্যার আছে সেটা রান করে বসে থাকে। গুগল সার্চ দিয়ে আপনিও এরকম সফটওয়্যার নামাতে পারেন, আপনার জিপ করা ফাইলের ভুলে যাওয়া পাসওয়ার্ড রিকভারি করার জন্য।
৩. একই পাসওয়ার্ড কখনই আপনি সব একাউন্টে ব্যবহার করবেন না। ভিন্ন ভিন্ন একাউন্টের জন্য ভিন্ন ভিন্ন পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন। এতে একটা একাউন্ট হ্যাক হলে অন্যগুলো বেঁচে যাবে। এই ভুলটা আমরা প্রায় সবাই করে থাকি।
৪. আগে একবার ব্যবহার করেছেন এরকম পাসওয়ার্ড ব্যবহার করবেন না।
৫. Never remember my password বাটনে চাপার অভ্যাস করুন। গুগল কিংবা আপনি যেই ব্রাউজার ব্যবহার করেন তাকে আপনার পাসওয়ার্ড মনে রাখার দায়িত্ব থেকে নিষ্কৃতি দিন। এর মানে এই না আপনি গুগলকে বিশ্বাস করছেন না, এর মানে হল – আপনার ইমেইল পাসওয়ার্ড হ্যাক হলে সব পাসওয়ার্ড হ্যাকারের হাতে যেন না যায় সেই ব্যাবস্থা করা।
৬. Password কিংবা P@ssw0rd দুইটা আসলে মোটামুটি একই স্ট্রেন্থের পাসওয়ার্ড। এরকম পাসওয়ার্ড দেয়া থেকে বিরত থাকুন।
৭. অন্যের কম্পিউটারে নিজের একাউন্ট লগইন করা থেকে বিরত থাকুন, যদি করেই ফেলেন সাইন আউট করুন এবং কুকিজ ডিলেট করে দিন।
৮. আন-সিকিউরড ওয়াই-ফাই কানেকশনের ক্ষেত্রে আপনার পাসওয়ার্ড ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
৯. আপনার পাসওয়ার্ড একান্তই আপনার নিজস্ব ব্যাপার। কাওকে আপনার পাসওয়ার্ড জানানো থেকে বিরত থাকুন।
১০. নিয়মিত আপনার পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন, ডেস্কের সামনে কিংবা স্টিকি পেপারে আপনার পাসওয়ার্ড লিখে রাখা থেকে বিরত থাকুন।
কিভাবে সিকিউরড পাসওয়ার্ড নির্বাচন করবেন
কিভাবে সিকিউরড পাসওয়ার্ড নির্বাচন করার ক্ষেত্রে নিচের কয়েকটি বিষয়গুলোর উপর নজর রাখুনঃ
১. নুন্যতম ১০ ক্যারেকটারের পাসওয়ার্ড কিংবা তার চেয়ে বেশি লম্বা পাসওয়ার্ড নির্বাচন করুন।
২. ছোটহাতের (a-z), বড়হাতের (A-Z), ডিজিট (0-9) এবং স্পেশাল ক্য্যরেক্টারের (!,@,#,$,% ইত্যাদি) মিক্স পাসওয়ার্ড লম্বা নির্বাচন করুন।
৩. নিয়মিত আপনার পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুণ।
এছাড়াও আপনি পাসওয়ার্ড ম্যানেজার সফটওয়্যার ব্যবহার করতে পারেন। পাসওয়ার্ড ম্যানেজার সফটওয়্যার আপনাকে স্ট্রং পাসওয়ার্ড তৈরি করতে সাহায্য করবে। আরেকটি সহজ উপায় আছে, একটি ইংরেজি বাক্য নির্বাচন করতে পারেন, যেমন- This is my January Password for google email এবার এই বাক্যের সকল শব্দের প্রথম অক্ষর নিয়ে TimJpfgm এবং কিছু স্পেশাল ক্য্যরেক্টারের আগে পিছে যোগ করে %TimJp4gm% একটা স্ট্রং পাসওয়ার্ড তৈরি করে নিতে পারেন।
গুগল আপনার পেছনে কি কি গুপ্তচরগিরি করছে জানার জন্য এই ব্লগ পড়ুন।
মনে রাখবেন, আপনার পাসওয়ার্ড খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা জিনিষ, হেলাফেলা করবেন না। আশা করি আমার ব্লগ থেকে আপনি পাসওয়ার্ড নিয়ে সকল বিষয় জানতে পেরেছেন। হ্যাকারদের হ্যাকিং থেকে নিরাপদ থাকবেন, ধন্যবাদ। আমার রেডিটুরিডিং ব্লগ আবারও পড়বেন এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি।