আমেরিকা আবিস্কার
আমেরিকা আবিস্কার

কলোম্বাসের সময়ে ভারতবর্ষের ধনরত্ন, মসলা, সুতি কাপড় কিংবা চীনাদের চীনামাটির থালা বাসন, সিল্ক ইউরোপিয়ানদের কাছে বরাবরই আকর্ষণের বস্তু ছিল। কিন্তু এসব পণ্য স্থলপথে আনতে হত বিধায় এই ব্যবসা ছিল অটোম্যান সাম্রাজ্য এবং আরব বনিকদের হাতে। এজন্য ইউরোপিয়ানরা সবসময় চাইত সমুদ্রপথে ভারতবর্ষ তথা ইন্ডিয়া যাবার একটা নৌপথ আবিস্কার করতে। যাতে সরাসরি ভারতের সাথে বানিজ্য করতে পারে এবং একইসাথে উপনিবেশ গড়ে তুলতে পারে।মূলত ভারতবর্ষ যাওয়ার নৌপথ আবিস্কার করতে গিয়েই  আমেরিকা আবিস্কার করে ফেলেন কলোম্বাস নামের এক ইতালিয়ান নাবিক।

কলম্বাস ছিলেন ইতালির জেনোয়া শহরের এক সাহসী নাবিক। তার পুরো নাম ছিল ল্যাটিন ভাষায়– ক্রিস্টোফোরাস কলোম্বাস। আর জেনোয়ার স্থানীয় ভাষায় তার নাম ছিল ক্রিস্টোফ্ফা করোম্বো। ইংরেজিতে ক্রিস্টোফার কলম্বাস হিসেবেই তিনি পরিচিত।

ততদিনে এটা প্রতিষ্ঠিত সত্য যে পৃথিবী গোলাকার। ইউরোপ থেকে পশ্চিমে জাহাজ চালনা করতে থাকলে চীন এবং পরে ভারতে পৌছানো সম্ভব।ইতালির নাবিক কলোম্বাস এই থিউরী সহজেই বুজতে পেরেছিলেন কিন্তু এই অভিযান চালানোর মত সামর্থ্য তার ছিলনা। সোজা পশ্চিমে গেলে ভারত কিংবা চীন কিন্তু এর মাঝে যে আরেকটি মহাদেশ থাকতে পারে এই ধারণা তার মাথায় আসেনি। কোন ক্ষমতাশীল ব্যক্তি কিংবা রাজাই তার এই অভিযানে অর্থায়ন করতে রাজি ছিলেননা। অবশেষে ১৪৮৬ সালে স্পেনের রাজা তার প্রস্তাবে রাজি হন। সেই সুত্র ধরে ১৪৯২ সালের এপ্রিল মাসে স্পেনের রাজা ও রানীর অর্থায়নে ৩টি পাল তোলা জাহাজ এবং ৮৭ জন নাবিক নিয়ে ভারতবর্ষের উদ্দেশ্যে পশ্চিম দিকে যাত্রা শুরু করে।

দীর্ঘদিন একঘেয়ে যাত্রার পর কলোম্বাস মাটির দেখা পান এবং তিনি মনে করেন তিনি ভারতেই নেমেছেন। মূলত তিনি পৌছান আমেরিকা মহাদেশের বাহামা দ্বীপপুঞ্জে এবং এখান থেক তিনি আরও কয়েকটি দ্বীপে নোংগর করেন। বাহামা থেকে জাপান যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা করে তিনি কিউবায় পৌছান। বর্তমানের ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ বা ওয়েস্ট ইন্ডিজ নামে আমরা এগুলোকে চিনি। ১৪৯২ সাল থেকে ১৫০২ সাল পর্যন্ত কলোম্বাস সবমিলিয়ে চারবার নৌযাত্রা করেন। প্রতিবারই তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিজেই আসেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এই মনোভাব পোষন করতেন যে তিনি ভারতবর্ষের আশেপাশে কোথাও এসেছেন।

আমেরিকা আবিস্কার
কলোম্বাসের ৪টি ভিন্ন ভিন্ন অভিযান

মূলত কলোম্বাস ভারতের উদ্দেশ্য নৌযাত্রা করলেও তিনি আমেরিকা মহাদেশে পৌছান এবং তার অভিযানে অর্থ বিনিয়োগকারী ইউরোপীয় শক্তি স্পেন উত্তর আমেরিকা থেকে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ হয়ে দক্ষিণ আমেরিকার একেবারে দক্ষিণতম প্রান্ত চিলি পর্যন্ত বিস্তীর্ণ সুবিশাল এক ভূখণ্ড স্পেনীয় উপনিবেশের অধিনে নিয়ে আসে। একারনে কলম্বাসকে আমেরিকার আবিস্কারক না বলে ইউরোপের সাথে আমেরিকার পরিচায়ক বলাটা অধিক যুক্তিযুক্ত। তার চারটি সমুদ্রযাত্রার কারনেই কানাডার উত্তর প্রান্ত থেকে চিলির দক্ষিন প্রান্ত পর্যন্ত ইউরোপিয়ানরা ( ডাচ-ব্রিটিস-পূর্তগীজ-স্প্যানিস-ফ্রেঞ্চ) তাদের উপনিবেশের সাম্রাজ্য গড়তে সফল হয়।

এদিকে কলোম্বাস যেরকম স্পেনের রাজার অর্থায়নে সমুদ্রযাত্রা করেন, আমেরিগো ভেসপুচ্চি তেমনি পর্তুগালের হয়ে ১৫০১ সালে এবং ১৫০২ সালে যাত্রা করে দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজিলে গিয়ে পৌছান। ভেসপুচ্চি  ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন যে কলম্বাস যাকে ভারত ভেবে ভুল করেছিলেন সেটা আসলে অনাবিষ্কৃত নতুন একটি মহাদেশ। ভেসপুচ্চির নিজের সমুদ্রযাত্রার বিষয়ের উপর লেখা এতই জনপ্রিয়তা পেয়েছিল যে, তাকেই দক্ষিণ আমেরিকার আবিষ্কারক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। জার্মানির ভূগোলবিদ ভাল্ডয়ে মুলার ব্রাজিলকে আমেরিগো ভেসপুচ্চির সম্মানে আমেরিকা নামে আখ্যা দেন। আমেরিকা নামটা এতই জনপ্রিয় হয়ে পরে যে, ব্রাজিল থেকে উত্তর আমেরিকা আর দক্ষিণ আমেরিকা দুই মহাদেশেরই নামকরণ করা হয় আমেরিকা।

কলোম্বাস আমেরিকা সর্বপ্রথম আবিস্কার করলেও তার ভুলের কারনে আমেরিকার আবিস্কারক হিসেবে আমেরিগো ভেসপুচ্চির নাম ইতিহাসে লেখা আছে। যদিও বর্তমান ইতিহাসবিদগণ আমেরিগো ভেসপুচ্চিকেও আমেরিকার আবিস্কারক হিসেবে মানতে নারাজ। তারা মনে করেন ভাইকিংরাই সর্বপ্রথম আমেরিকা আবিস্কার করেন। ভাইকিংদের নিয়ে আমার আরেকটি ব্লগে আমি বিস্তারিত লিখেছি। পড়ে দেখতে পারেন এইখানে

আমেরিকাতে কলোম্বাস দিবস নামে একটি দিবস পালিত হয় অক্টোবার মাসের দ্বিতীয় সোমবার। কলোম্বাসের আমেরিকার মাটিতে প্রথম পা রাখাকে স্মরণীয় করে রাখতে এইদিনকে সরকারি ছুটির দিন ঘোষনা করা হয়েছে।

Previous articleভাইকিং- কলম্বাসের ৫০০ বছর আগেই যারা আমেরিকা আবিস্কার করেছে।
Next articleআমেরিকার গৃহযুদ্ধ, দাসপ্রথার বিলোপ এবং প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের খুন
Mamun
যে ব্যর্থ সে অজুহাত দেখায়, যে সফল সে গল্প শোনায়। আমি অজুহাত নয় গল্প শোনাতে ভালবাসি। আসুন কিছু গল্প শুনি, নিজের গল্প অন্যকে শুনাই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here