ব্লগ লেখার কলাকৌশল

 

আজকের লেখায় যা থাকছে

আগের পর্বে শুধুমাত্র ভূমিকা ছিল, যাদের ব্লগ লেখার কলাকৌশল নিয়ে জানার আগ্রহ আছে আশা করি পর্ব- ০১ পড়ার পর পর্ব-০২ এর জন্য অপেক্ষা করেছেন। আসুন আর দেরি না করে ব্লগ লেখার কলাকৌশল নিয়ে আলোচনায় চলে যাই।

ব্লগ লেখার কলাকৌশল: আর্টিকেল লিখার আগে যা যা করতে হয়

একটি ফোকাস কিওয়ার্ড নির্বাচন

বলা হয়ে থাকে, কোনো ফোকাস কিওয়ার্ড ছাড়া আর্টিকেল লিখা এবং অন্ধকারে ঢিল ছোড়া একই ব্যাপার। আসলেই কিন্তু তাই। ফোকাস কিওয়ার্ডই নির্ধারণ করে দেয় কোন আর্টিকেলের অডিয়েন্স কারা। তাই আর্টিকেল লিখা শুরুর আগে অবশ্যই ফোকাস কিওয়ার্ড নির্ধারণ করে নিন। কার্যকরী ফোকাস কিওয়ার্ড পেতে গুগল এ্যাডওয়ার্ড খুব কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। তাই গুগল এ্যাডওয়ার্ড ব্যবহার করতে পারেন।

  • কিওয়ার্ড বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কিছু দিকে অবশ্যই নজর রাখতে হবে, যেমনঃ
  • পছন্দের ফোকাস কিওয়ার্ডটিতে প্রতিমাসে ১০০ জনের বেশি মানুষ সার্চ দেয় কিনা।
  • কিওয়ার্ডটির কম্পিটিশন কেমন। কম্পিটিশন ‘Low’ হলে সবচেয়ে বেশি ভালো হয়। এতে গুগলে ওই কিওয়ার্ডে র‍্যাংক করার একটা সুযোগ থাকে।
  • কিওয়ার্ডটির সিপিসি রেট কেমন।
  • কিওয়ার্ডটির অন্য কোনো সমার্থক শব্দ উচ্চারণে বেশি সহজ কিনা।

বলে রাখা ভালো, এগুলো আপনি গুগলে এ্যাডওয়ার্ড এ সহজে দেখে নিতে পারবেন।

আর্টিকেলের কাঠামো ঠিক রাখা

একটি আর্টিকেলের সুন্দর গঠন যে শুধু সার্চ ইঞ্জিনে পজিশন করতেই লাগে, সেটা নয়। ভিজিটরদের লেখা পড়তে সুবিধা করে দিতেও ভালো গঠন বজায় রাখা জরুরী। লেখার সময় ভালো গঠন কাঠামো বজায় রাখতে নিচের কাজগুলো করতে ভুলবেন না।

বিভিন্নরকম হেডিং ব্যবহার করুন

বেশ কয়েক প্রকারের হেডিং আছে। ৩ থেকে ৫ টা H2 হেডিং দিয়ে তার ভেতরে আরো কয়েকটি H3, H4 হেডিং ব্যবহার করে সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে আর্টিকেল লিখুন। তবে H1 হেডিং ব্যবহার করবেন না। কারণ আর্টিকেলের টাইটেলই আটোমেটিকভাবে H1 হেডিং এ পরিণত হয়। আর একটি পেইজে H1 হেডিং একটিই যথেষ্ঠ।

প্যারা আকারে লিখুন

একসাথে ঢেলে লিখে রাখলে দেখতে ভালো লাগে না, পাশাপাশি ভিজিটরদেরও পড়তে অসুবিধা হয়।  তাই আপনার আর্টিকেলটি অনেকগুলো প্যারায় বিভক্ত করে সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে লিখুন। তবে একটি প্যারায় ৩ টির কম বাক্য ব্যবহার করবেন না। চেষ্টা করবেম ৮-১০ টির বেশি বাক্য ব্যবহার করার।

ভূমিকা লিখে লেখা শুরু করুন

ভূমিকা দিয়ে লিখা শুরু করলে পাঠকের পুরো আর্টিকেল সম্পর্কে একটা ইতিবাচক ধারণা গড়ে ওঠে। এটা লিখালিখিতে পেশাদারিত্বের পরিচয় বহন করে। ভূমিকায় পুরো আর্টিকেলে পাঠক কি কি জানতে চলেছেন, সে সম্পর্কে হালকা ধারণা দেয়ার চেষ্টা করুন।

উপসংহার লিখে রেখা শুরু করুন

লিখতে লিখতে হুট করে আর্টিকেল শেষ করে দেবেন না। এতে পাঠক আপনার পরবর্তী লিখাগুলোর প্রতি আর সেরকম কোনো আকর্ষণ অনুভব করবে না। আর্টিকেলের মূল আলোচনা শেষে পুরো আলোচনার একটি সার সংক্ষেপ ও কয়েকটা উপদেশবাণী দিয়ে আলাদা প্যারা করে লিখা শেষ করুন।

লিখার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছবি ব্যবহার করুন

প্রতিটি আর্টিকেলের জন্য অন্তত একটি ছবি যুক্ত করা বাধ্যতামূলকভাবে দরকারী। আর্টিকেলে ছবি যুক্ত না করলে লেখা তেমন আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে না। তবে ছবি যুক্ত করার আগে অবশ্যই সাইজ কমিয়ে নেবেন। আর মনে রাখবেন অন্য কোন সাইট থেকে ছবি কপি করা যাবেনা। কপি করা সাইট গুগল র‍্যাংক করে না।

Bold, Italic, Underline সহ বিভিন্ন ট্যাগ ব্যবহার করুন

বিভিন্নরকম ট্যাগ যুক্ত করে লিখলে পাঠক খুব সহজেই আপনার লিখা বুঝতে পারবে। তাই এসব ট্যাগ কোনটা কিসে ব্যবহার করা হয়, সেটা বুঝে সঠিক মাত্রায় যুক্ত করুন।

ব্লগ লেখার কলাকৌশল: লিখার মাঝে এসইও করা

লিখার কাঠামো ঠিক থাকলে এসইও এর ৩০% কাজ হয়ে যায়। বকি থাকে ৭০%।  এই ৭০% এর মাঝে আরো ৫০% কাজ হয়ে যাবে, যদি লিখার ভেতর নিচের কাজগুলো কেউ করে।

আর্টিকেলের ভূমিকা ও উপসংহার প্যারায় ফোকাস কিওয়ার্ড লিখা

প্রতিটি লিখার প্রথম প্যারাগ্রাফ ও শেষ প্যারাগ্রাফে অবশ্যই ফোকাস কিওয়ার্ড যুক্ত রাখুন। আরো স্পষ্টভাবে বললে, লেখা শুরু ও শেষের ২০০ শব্দের ভেতর ফোকাস কিওয়ার্ড রাখার চেষ্টা করুন। সবচেয়ে ভালো হয়, যদি লেখার প্রথম প্যারার প্রথম বাক্যে ফোকাস কিওয়ার্ডলে জায়গা দিতে পারেন।

লিখার ভেতর বেশ কয়েকবার ফোকাস কিওয়ার্ড ঢুকিয়ে দেয়া

লিখার ভেতর বার বার ফোকাস কিওয়ার্ড ব্যবহার করুন। তবে অতিমাত্রায় ব্যবহার করবেন না। কিওয়ার্ড ডেনসিটি অনুযায়ী প্রতি ১০০ শব্দে ২ বারের বেশি ফোকাস কিওয়ার্ড ব্যবহার করতে যাবে না। নয়তো ঝামেলায় পড়তে হবে।

ছবির ALT ফিল্ডে ফোকাস কিওয়ার্ড লিখা

এটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ। এটা না করলে আপনার ওয়েবসাইটের ছবিগুলো গুগলে শো করবে না। তবে একাধিক ছবি যুক্ত করলে প্রতিটির Alt ফিল্ডে একইরকমভাবে ফোকাস কিওয়ার্ড ব্যবহার করবেন না। বিভিন্নভাবে ফোকাস কিওয়ার্ড যুক্ত করার চেষ্টা করুন।

ইন্টার্নাল লিংক যুক্ত করুন

মানে বুঝলেন না? একটি আর্টিকেলে সেই আর্টিকেলের অনুরুপ আপনার ওয়েবসাইটে থাকা বিভিন্ন আর্টিকেলের লিংক জূড়ে দিন। এতে ভালো এসইও রেজাল্ট পাওয়া সম্ভব। অবশ্যই, প্রতিটি লিংকের Anchor ফিল্ডে কিওয়ার্ড রাখার চেষ্টা করুন।

হেডিং এ ফোকাস কিওয়ার্ড রাখা

হেডিং এ ফোকাস কিওয়ার্ড রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেকোনো প্রকার হেডিং এ ফোকাস কিওয়ার্ড দিতে পারেন। কেননা, গুগল H2 থেকে নিচের হেডিংগুলোকে আলাদা ভাবে না। তাই H2 এ ফোকাস কিওয়ার্ড দেয়া যে কথা, H4 এ কিওয়ার্ড দেওয়াও একই কথা।

ব্লগ লেখার কলাকৌশল: এছাড়াও অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যেসব দিকে–

প্রতিটি আর্টিকেলের ডেসক্রিপশন যুক্ত করা

আপনি ব্লগার কিংবা ওয়ার্ডপ্রেস দুই জায়গাতেই ডেসক্রিপশন ফিল্ড পেয়ে যাবেন। এখানে আপনার আর্টিকেলের সার সংক্ষেপ ৫-৭ বাক্যে লিখে ফেলুন। লিখার সময় অবশ্যই সেটাকে আকর্ষণীয়ভাবে লিখবেন। কারণ গুগলে আপনার লিখার টাইটেলের নিচে এটি প্রদর্শিত হবে। ডেসক্রিপশন বক্সে সর্বোনিম্ন ১ বার ও সর্বোচ্চ ২ বার ফোকাস কিওয়ার্ড রাখুন। একে মেটা ডেস্ক্রিপ্সন বলে।

টাইটেলটি আকর্ষণীয় হিসেবে তৈরী করা

টাইটেলের গুরুত্ব নিশ্চয়ই নতুন করে বলার কিছু নেই। একটা টাইটেলই সকল সার্চ ইঞ্জিনসহ সব জায়গায় একটা আর্টিকেলের প্রতিনিধিত্ব করে। তাই ভিজিটর টানতে টাইটেল আকর্ষণীয় হওয়া অপরিহার্য। টাইটেলের শুরুতেই ফোকাস কিওয়ার্ড আছে কিনা নিশ্চিত হন।

ওয়েবসাইটের হেডার এবং ফুটারের সিম্পল ডিজাইন নিশ্চিত করা।

একটা আর্টিকেলের মোট সাইজের ওপর নির্ভর করে সেটির লোড স্পীড কত হবে। যেহেতু হেডার ও ফুটার প্রতিটি আর্টিকেলের উপরে ও নিচে প্রদর্শিত হয়, তাই অবশ্যই সেগুলোর সাইজ ও ডিজাইন একটা বড় ফ্যাক্ট। সেগুলো সিম্পলের মাঝে রাখার চেষ্টা করুন। অনেকে নতুন ওয়েবসাইট বানাতে গেলেই নতুন বৌয়ের মতো ডিজাইন করার চেষ্টা করে। এই ভুল করবেন না। ওয়েবসাইটের ডিজাইন যত সিম্পল হবে, ততই ভালো।

পরিশেষে

সঠিক নিয়মে আর্টিকেল লিখার মোটামুটি সকল দিকনির্দেশনা দেয়ার চেষ্টা করেছি। কোনো নির্দিষ্ট পয়েন্ট বুঝতে না পারলে কমেন্ট করেবেন। আর এসব পুরোপুরি না বুঝতে পারলেও কোনো চিন্তা করবেন না, ভবিষ্যতে এসব নিয়ে আরো আলোচনা হতে চেলেছে আমাদের ব্লগে আর আগেও আরও আলোচনা হয়েছে।

আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, উপরে নির্দেশিত উপায়ে একটি আর্টিকেল লিখলে অবশ্যই গুগলসহ সকলপ্রকার সার্চ ইঞ্জিনে ভালো পজিশন করা সম্ভব। তবে সকল প্রকার আর্টিকেলে এগুলোর সব নিয়ম মানা হয়তো সম্ভব হবে না, কিন্তু চেষ্টা করবেন যতটুকু সম্ভব হয়, করার। যত ভালোভাবে এগুলো মানার চেষ্টা করবেন, আপনার গুগলে র‍্যাংক করার সম্ভাবনা ততই বেড়ে যাবে।

ধন্যবাদ মনোযোগ দিয়ে ব্লগ লেখার কলাকৌশল পড়ার জন্য। যদি আপনি পুরোটুকু পড়ে থাকেন, তবে আমাকে বলতেই হবে, আপনার দম আছে। এই দমটাই দরকার সুন্দর একটা আর্টিকেল লিখার জন্য। ধন্যবাদ, ভালো থাকবেন।

Previous articleআর্টিকেল লেখার নিয়ম- ব্লগ লেখার কলাকৌশল পর্ব-০১
Next articleঢাকার আশেপাশে বেড়ানোর জায়গা – কম সময়ে ঘুরে আসুন পর্ব- ০৩
S M Hasib Hasnain
একজন আবিষ্কারক– যে নিজেকে প্রতিদিন হাজারবার নতুন করে আবিষ্কার করে....

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here