আমাদের অনেকেরই মনের ইচ্ছা একটি ওয়েব সাইট বানানোর। আমার নিজেরও এই ইচ্ছা ছিল, শুধু ছিল না, বেশ ভাল রকমই ছিল বলা যায়। লকডাউনের প্রথম মাসেই যখন দেখলাম অফিস বন্ধ, হাতে তেমন কোন কাজ নাই, ঠিক তখনই কাজে নেমে পড়লাম। কিন্তু একটা ওয়েবসাইট বানানো কি এতই সোজা? হ্যা, আপনি যতটুকু ভাবছেন তার চেয়েও অনেক সোজা। দরকার শুধু দৃঢ় ইচ্ছা শক্তি আর এই কাজের প্রতি ভালবাসা। তাহলেই আপনি পারবেন। মনে রাখবেন, এই কাজের জন্য আপনার কোন প্রোগ্রামিং নলেজ কিংবা কোন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং নলেজের প্রয়োজন নাই। ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে ওয়েবসাইট তৈরি করা আপনার জন্য বা হাতের খেলা বই আর কিছুই নয়।
সবাই চাকুরির পাশাপাশি একটু বাড়তি ইনকাম করতে চায়, আর বেশিরভাগ মানুষই চায় সেটা ঘরে বসে করতে। নিচের কয়েকটি পর্ব পড়ে নিন-
- পর্ব ০১ঃ অনলাইনে আয় নিয়ে উৎসাহিত হোন।
- পর্ব ০২ঃ আরেকটু জানুন উৎসাহ আরও বড়বে।
- পর্ব ০৩ঃ এফিলিয়েট মার্কেটিং নিয়ে জানুন।
- পর্ব ০৪ঃ ব্লগার.কম এ কিভাবে ফ্রি ব্লগ সাইট বানাবেন তা শিখুন।
এগুলো যখন আপনার জানা হয়ে গেল, ব্লগিং নিয়ে আপনার ভালবাসা থাকলে আপনি নিশ্চয়ই চাইবেন নিজস্ব সাইটে আপনার লেখা লিখতে, তাইনা? কিংবা আপনার যদি কোন নিজস্ব ব্যবসা থাকে তার একটি ওয়েব সাইট খুলতে? তাহলে আর দেরি না করে পড়তে থাকুন-
প্রথম প্রয়োজন একটি ডোমেইন এবং হোস্টিং
আপনাকে একটি ডোমেইন এড্রেস কিনতে হবে। ডোমেইন কি জিনিস? যেমন আমার এই ব্লগের নাম www.ready2reading.com এই নামটি মানে এই ডোমেইন এড্রেসটি আমি কিনেছি। মানে ইন্টারনেট জগতে এই নাম বা ঠিকানা বা ওয়েব সাইট এড্রেস কিংবা ডোমেইন আর কেও ব্যবহার করতে পারবেনা। আশা করি ডোমেইন কি বুঝতে পেরেছেন। এটি বাৎসরিক ফি দিয়ে কিনতে হয় এবং বছর বছর তা রিনিউ করতে হয়।
এবার আসুন হোস্টিং কি জেনে নেই। ডোমেইন তো কিনলেন, আপনার সাইটের জিনিসগুলো রাখবেন কোথায়? রাখার জন্য একটা জায়গা ত লাগবে, তাই না? আপনার পিসিতে রাখতে পারেন-সেক্ষত্রে আপনার পিসি বছরে ৩৬৫ দিন চালু রাখতে হবে, সেটা ত আর সম্ভব না। তাই এমন কারও কাছ থেকে কিনতে হবে যার পিসি সারা বছর চালু থাকে- কখনও বন্ধ হবেনা। বিভিন্ন হোস্টিং কম্পানি এই সুবিধা দিয়ে থাকে, তাদের কাছ থেকেই হোস্টিং কিনে নিতে হয়।
আশা করি বুঝে গেছেন। নতুন অনেকেই এই ডোমেইন আর হোস্টিং জিনিসটা গুলিয়ে ফেলেন। দুইটাকে এক করে ফেলেন। আসলে দুইটা সম্পূর্ণ ভিন্ন ব্যাপার।
কোথা থেকে কিনবেন আর কিভাবে কিনবেন, দাম কত
কেনার জায়গার অভাব নেই। দেশি বিদেশি বিভিন্ন কম্পানি আছে আপনাকে এই সেবা দেয়ার। দেশি কম্পানির মধ্যে আছে হোস্টিং বাংলাদেশ সহ আরও অনেক-একটু কস্ট করে গুগল করে নিন। আমি এই আমার এই ডোমেইন কিনেছি এক্সনহোস্ট থেকে, পারফরমেন্স ভালই।
আবার আমার আরেকটি ব্লগের (www.tricky-tips.com) জন্য ৫ বছরের ডোমেইন ও ২ বছরের ওয়ার্ডপ্রেস হোস্টিং কিনেছি ৮০ ইউওএস ডলার দিয়ে নেমচিপ থেকে। এখেত্রে পেমেন্ট করেছি আমার ব্রাক ব্যংকের ক্রেডিট কার্ড দিয়ে। ও হ্যা, ক্রেডিট কার্ড দিয়ে বিদেশি সাইট থেকে কিনতে হলে আপনার আপনার ক্রেডিট কার্ড অবশ্যই এন্ডোরস করে নিতে হবে এবং অনলাইন ট্রান্স্যাকশন অভার ফোনে চালু করে নিতে হবে।
SSL সার্টিফিকেট সহ কিনবেন অবশ্যই। এটি ফ্রি পাবেন, তাহলে আপনার সাইটের আগে https:// থাকবে যার মানে সিকিউরড সাইট।
খরচ খুব সামান্যই বলা যায় তাই না? তাহলে আপনার সাইটের জন্য একটি যুতসই নাম ঠিক করে ফেলুন আর কিনে ফেলুন এক বছরের জন্য ডোমেইন আর হোস্টিং, শুরু করে দিন এখনই।
ডোমেইন হোস্টিং কেনার পরের ধাপগুলো
ডোমেইন আর হোস্টিং তো হল এবার পরের কাজ কি, তাই না? আপনি নিজেই করে নিতে পারবেন কিন্তু একটু ধারনা দিচ্ছি আমি তাহলে আরও সহজ হবে কাজগুলো করতে। নিচের ধাপগুলো অনুসরন করে নিন-
১. আপনি নিশ্চই সি প্যানেলের একটি আইডি-পাসওয়ার্ড পেয়ে গেছেন এর মাঝেই। এবং কোন লিংক বা আইপি দিয়ে সি প্যানেলে ঢুকবেন তাও মেইলে পেয়ে গেছেন। ঐ লিংকের মাধ্যমে সি প্যানেলে লগইন করে ফেলুন। তাহলে নিচের মত একটি পেইজ পেয়ে যাবেন।
২. SOFTACOLOUS APPS INSTALLER থেকে ওয়ার্ডপ্রেস ইন্সটল করে নিন। ইন্সটল করার সময় যা যা ইনফরমেশন চায় তা দিয়ে দিবেন, ওয়ার্ডপ্রেস এর জন্য আইডি পাসওয়ার্ড কি দিচ্ছেন মনে রাখুন। এ্যডমিন হিসেবে আপনার নিজের পার্সোনাল ইমেল আইডি দিন। ২/৩ মিনিটে আপনার ওয়েব সাইটে ওয়ার্ডপ্রেস ইন্সটল হয়ে যাবে। এডমিন ইমেইলে নোটিফিকেশন মেইল পাবেন। লিংক পাবেন কিভাবে লগইন করবেন। ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে ওয়েবসাইট তৈরি করার জন্য আপনাকে ওয়ার্ডপ্রেস ইন্সটল করতে হবে।
৩. ইন্সটলেশনের সময় বেসিক থিম সিলেক্ট করে দিন পরে দেখেশুনে ভাল ফ্রি থিম ইন্সটল করতে পারবেন। কিংবা প্রিমিয়াম থিম কিনে নিতে পারবেন, যেমন আমার এই সাইটের থিমটি আমি কিনেছি থিমফরেস্ট থেকে ৬২ ডলার দিয়ে। প্রাথমিভাবে আপনার কোন থিম কিনার দরকার নাই বললেই চলে।
৪. এবার প্রয়োজনীয় কিছু প্লাগইন ইন্সটল করে নিন Plugin অপশনে গিয়ে। যেমন- লিখার জন্য ক্লাসিক এডিটর, অনসাইট এসইও করার জন্য ইয়োস্ট ইত্যাদি। হাজার হাজার প্লাগইন আছে আপনার যেটা প্রয়োজন তা খুঁজে নিন। আস্তে আস্তে আপনি নিজেই বুঝে যাবেন।
৫. আপনার ওয়েব সাইটের জন্য একটি মেনুবার তৈরি করে নিন, এখানে হোমপেজ, এবাউট, কন্টাক্ট আস, প্রাইভেসি পলিসি ইত্যাদি থাকবে।
৬। আপনার ওয়ার্ডপ্রেস Theme অপশনে গিয়ে থিমটি কাস্টোমাইজ করে নিতে পারেন, সাইডবার সেট করতে পারেন, বিভিন্ন উইজেট সেট করতে পারেন। এসবই আপনি করে ফেলতে পারবেন মুহূর্তের মাঝেই।
৭. এছাড়াও আপনি সেটিং এ গিয়ে রিডিং, রাইটিং, কমেন্ট ইত্যাদি অপশনগুলো পরিবর্তন করে নিতে পারবেন আপনার ইচ্ছানুযায়ী।
আপনার সাইট কিন্তু লাইভ এ আসার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেছে। এবার আপনি Posts বাটনে ক্লিক করে আপনার প্রথম পোস্ট শুরু করে দিতে পারবেন। এবং Publish বাটনে ক্লিক করে আপনার পোস্ট পাবলিশ করে দিতে পারেন।
দেখলেন তো ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে ওয়েবসাইট তৈরি কত সহজ? উপরের লেখাটি বেসিক ধারনা পেতে সহায়তা করবে, কিন্তু এগুলোই সব। আর তেমন কিছু নেই। একটু এ্যাডভান্স লেভেলের যা আছে তা জানার জন্য য়ামার পরের পোস্টের দিকে খেয়াল রাখুন, ধন্যবাদ।
শিক্ষনীয় টপিক। ধন্যবাদ
ধন্যবাদ পড়ার জন্য।