হ্যাকিং শব্দটির সাথে আমরা কমবেশি সবাই পরিচিত। সাধারনত কারও অনুমতি ছাড়া। তার কম্পিউটারে কিংবা নেটওয়ার্কে অনুপ্রবেশ করে তার ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নেয়াকেই হ্যাকিং বলে। আর যারা এই কাজটি করে থাকেন তাদেরকে হ্যাকার বলে। হ্যাকাররা সাধারনত কোন নেটওয়ার্কের বাগ কিংবা ত্রূটি বের করে অনুপ্রবেশ করে তার উদ্দেশ্য হাসিল করে। হ্যাকিং মানে শুধুই ওয়েব সাইট হ্যাকিং কেই বুঝায় না, বরং মোবাইল ফোন, ল্যান্ড ফোন কিংবা যেকোন ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস মালিকের অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করাও হ্যাকিং এর আওতায় পরে। যারা হ্যাকিং করে থাকে তারা আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে অপরাধী হলেও আজ আমি আপনাদের এমন একজন হ্যাকারের সাথে পরিচয় করিয়ে দেব যার মুক্তির জন্য সারা পৃথিবীব্যাপি আন্দোলনের ঝড় উঠেছিল। অনেকেই তাকে গরীবের রবিন হুড নামেও চেনে। তিনি হলেন হামজা বেন্দালেজ। ইন্টারনেট জগতে তিনি হ্যাপি হ্যাকার নামেও বেশ পরিচিত।
কে এই হামজা বেন্দালেজ
হামজা বেন্দালেজ একজন আলজেরিয়ান নাগরিক। তিনি বেড়ে উঠেছেন আলজেরিয়ার তিজি ওজু নামক স্থানে। হ্যাকিং জগতে তিনি BX1 নামেই পরিচিত। SPYEYE নামক এক ভাইরাসের মূল ডেভেলপারদের মধ্যে তিনি অন্যতম।
SPYEYE একটি কম্পিউটার প্রোগ্রাম যা কিনা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিভিন্ন গোপন তথ্য বিশেষ করে অর্থ সংক্রান্ত তথ্য- ব্যাংকিং এর ইউজার নেম, পাসওয়ার্ড ইত্যাদি চুরি করতে সক্ষম হয় এবং কম্পিউটারে নিয়ন্ত্রন হ্যাকারদের হাতে তুলে দেয়। পরে হ্যাকাররা সেই তথ্য ব্যবহার করে একাউন্ট থেকে টাকা তুলে নেয়।
রাশিয়ার আলেকজান্ডার আন্দ্রেভিচ পানিন ছিলেন এই ভাইসের মূল কারিগর। হামজা বেন্দালেজ ছিলেন তার মূল ঘনিষ্ঠ সহযোগী। তারা এই প্রোগ্রামটি মাত্র ১০,০০০ ডলার মূল্যে বিভিন্ন জনের কাছে বিক্রয় করতেন। ধারনা করা হয় প্রায় ১৫০ জনের কাছে তারা এটি বিক্রয় করেছেন।
হামজা বেন্দালেজ কি করেছেন
হামজা বেন্দালেজ প্রায় দুই শতাধিক আমেরিকান ব্যাংক এবং অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান থেকে এই প্রোগ্রাম ব্যবহার করে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার তুলে নেন। এফবিআই এর তথ্য অনুযায়ী সারা বিশ্বে ৫০ মিলিয়ন কম্পিউটার এই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয় এবং সংক্রমন থেকে রক্ষার জন্য এর মালিকদের প্রায় ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ হয়।
হামজা বেন্দালেজ কিভাবে ধরা পরলেন
আগেই বলেছি হামজা বেন্দালেজ প্রায় ১৫০ জনের কাছে তাদের তৈরি ভাইরাস প্রোগ্রামটি বিক্রয় করেন। এক পর্যায়ে এফবিআই এর এক ছদ্মবেশি ক্রেতার কাছে তিনি ৮,৫০০ ডলারে এই ভাইরাসটি বিক্রি করেন এবং নজরে আসেন।এফবিআই এর তথ্যানুযায়ী ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে মালেশিয়া থেকে আলজেরিয়া যাবার পথে থাইল্যান্ড সুবর্ণভুমি বিমানবন্দরে থাই পুলিশের হাতে ধরা পরেন। একই বছর মে মাসে থাই পুলিশ তাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তর করেন। পরের মাসেই হার্টসফিল্ড-জ্যাকসন আটলান্টা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের ওপর দিয়ে যাওয়ার পথে মূল প্রোগ্রামার পানিন গ্রেফতার হন।
মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার হামজা বেন্দালেজ কি কাজে লাগিয়েছেন
এটি প্রমানিত নয় তবে শোনা যায় তিনি তার অর্জিত মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ফিলিস্তিন ও আফ্রিকার দুস্থদের মাঝে বিলিয়ে দিয়েছেন। একারনেই তাকে গরীবের রবিন হুড বলা হয়।
গ্রেফতার পরবর্তী শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের গুজব
গ্রেফতারের পরে বিচার বিভাগের আওতায় পক্ষে-বিপক্ষে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। পানিন এবং বেন্দালেজ দুইজনই তাদের বিরুদ্ধে আনিত সব অভিযোগ স্বিকার করে নেন। পানিনকে ৯ বছর ৬ মাস এবং বেন্দালেজকে ১৫ বছরের কারাবাস প্রদান করে মার্কিন আদালত।
কারাগারে প্রেরন করার পরপর বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়াতে গুজব রটে যায় তার মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয়া হয়েছে এবং তার সমর্থকেরা এই রায় কার্যকর না করার জন্য প্রচারনা চালাতে থাকে। তার এক সমর্থক ছড়িয়ে দেন হামজা বেন্দালেজ ২৮ কোটি মার্কিন ডলার ফিলিস্তিন ও আফ্রিকার দুস্থদের মাঝে বিলিয়ে দিয়েছেন। আজও তার মুক্তির দাবিতে তার সমর্থক হ্যাকাররা আমেরিকা, ফ্রান্স, জর্জিয়া সহ বিভিন্ন দেশের ওয়েবসাইট হ্যাক করে যাচ্ছে।
আলজেরিয়ায় অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস এই প্রচারনার বিরুদ্ধে টুইট করে এবং জানান দেয় হামজা বেন্দালেজ এখনো কারাগারে বন্দি জীবন কাটাচ্ছেন।
কেন তাকে স্মাইলিং হ্যাকার বলা হয়
গোয়েন্দা সংস্থার হাতে ধরা পরার পর তাকে কখনই হাসিমুখ ছাড়া দেখা যায়নি, সর্বদাই তাকে হাসি খুশি দেখা গেছে, তাই তাকে বলা হয় স্মাইলিং হ্যাকার।
হ্যাকার থেকে বাঁচতে কি করবেন
কেওই হ্যাকিং এর আওতামুক্ত নই আমরা। তাই আমাদের সবাই উচিত কিছু সাবধানতা অবলম্বন করা। আমার ব্লগে কিছু টিপস দেওয়া হল যা আপনাকে হ্যাকিং থেকে বাঁচতে সাহায্য করবে।
- অপরিচিত সফটওয়্যার ডাউনলোড করা কিংবা ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
- কোন সাইটে লগইন করার সময় অবশ্যই এড্রেসবারে দেখে নিবেন। শুধু http থাকলে সেখানে পাসওয়ার্ড ব্যবহার করবেন না, https থাকলে সেটা নিরাপদ ধরে নেবেন।
- যেকোন পাসওয়ার্ড হিসেবে শক্ত পাসওয়ার্ড ব্যবহার করবেন। পাসওয়ার্ড কি ধরনের ব্যবহার করবেন তা জানতে আমার এই ব্লগ পড়ুন, কাজে দিবে।
- অপরিচিত মেইল এড্রেস থেকে ইমেইল আসলে প্রয়োজনীয় না হলে এটাচমেন্ট খুলবেন না।
- নিজের পাসওয়ার্ড কিংবা পিন কোড গোপন রাখুন।
- যেকোন পাসওয়ার্ডের 2FA সিকিউরিটি রাখুন।
- অপরিচিত কম্পিউটার কিংবা নেটওয়ার্কে লগইন করা থেকে বিরত থাকুন।
আশা করি আজকের এই ব্লগ আপনাদের ভাল লেগেছে। সাথে থাকুন। ধন্যবাদ
Nice
ধন্যবাদ